০২:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জুমার নামাজের ফজিলত কী, বৃষ্টির কারণে কি জুমা মাফ হয়?

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:৪০:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
  • ২২ Time View


ইসলামে জুমার দিনের অনেক ফজিলত। সপ্তাহের সাতটি দিনের মধ্যে মুসলিম উম্মাহর কাছে শ্রেষ্ঠ দিন হলো পবিত্র জুমার দিন। পবিত্র কোরআনে ‘জুমা’ নামে একটি স্বতন্ত্র সুরাও অবতীর্ণ হয়েছে। জুমার ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন করো। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা, আয়াত : ৯)

হাদিস শরিফেও দিনটি সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সূর্য যে সব দিন উদিত হয় অর্থাৎ দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম দিন হলো জুমার দিন। এই দিন আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিন তাকে জান্নাতে দাখিল করা হয়েছে। এই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। কিয়ামতও সংঘটিত হবে এই দিনেই।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮৫৪)

বিখ্যাত সাহাবি হজরত সালমান ফারসি (রা.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করবে, সাধ্যমতো পরিচ্ছন্নতা অর্জন করবে, তেল ব্যবহার করবে বা নিজের ঘরে থাকা আতর মাখবে, এরপর জুমার দিকে বের হবে, (মসজিদে গিয়ে একসাথে থাকা) দুইজনের মাঝে গিয়ে বসবে না, যত রাকাত সম্ভব নামাজ পড়বে, এরপর ইমাম যখন খুতবা দেন তখন চুপ থাকবে। যে কেউই এসব করবে তাকেই এই জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত মাফ করা হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আরও বলেন, রাসুল (সা.)বলেছেন, ‘এক জুমা থেকে আরেক জুমা মধ্যবর্তী সময়ের (গোনাহের) জন্য কাফ্ফারা (পাপমোচনকারী), যদি কাবিরা গোনাহ না করা হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)

এজন্য আমাদের উচিত হবে জুমার নামাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এবং ওই দিন আগে আগে মসজিদে গিয়ে নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। সবার আগে আগমনকারীর নামে একটি মোটাতাজা উট কোরবানির সওয়াব লেখা হয়। এরপর আগমনকারীর নামে একটি গাভী কোরবানির সওয়াব লিখা হয়। এরপর আগমনকারীর নামে মুরগি দানের সওয়াব লিখা হয়। অতঃপর ইমাম বের হলে ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনতে থাকেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯২৯)

এখন প্রশ্ন হলো- এত অধিক ফজিলত হওয়া সত্ত্বেও বৃষ্টি কিংবা প্রাকৃতিক যে কোনও দুর্যোগে অনেক সময় ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং জুমার নামাজ ছুটে যায়। আর যেহেতু জুমার নামাজে জামাত অপরিহার্য, সেহেতু ঘরে একাকী পড়ারও সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে করণীয় কী?

এর উত্তর হলো- অতিবৃষ্টির কারণে জুমার জন্য মসজিদে যেতে না পারলে নিয়ম হলো, একাকী জোহর নামাজ পড়ে নেওয়া; নিজেরা বাড়িতে জুমার জামাত অথবা জোহরের জামাতও না করা। কিন্তু কেউ যদি আজান ও খুতবাসহ ন্যূনতম চারজন মিলে ঘরেও জুমা পড়ে নেয়, তাহলে জুমা সহি হওয়ার ন্যূনতম শর্ত পাওয়া যাওয়ার কারণে সেটি আদায় হয়ে যাবে এবং তাদেরকে আর ওই দিনের জোহর পড়তে হবে না। যদিও সেটি সঠিক কাজ হবে না। (আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ২/৩৯৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৪ ও আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫১)।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

News Editor

জনপ্রিয় খবর

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের শুভেচ্ছা

জুমার নামাজের ফজিলত কী, বৃষ্টির কারণে কি জুমা মাফ হয়?

Update Time : ০১:৪০:২৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫


ইসলামে জুমার দিনের অনেক ফজিলত। সপ্তাহের সাতটি দিনের মধ্যে মুসলিম উম্মাহর কাছে শ্রেষ্ঠ দিন হলো পবিত্র জুমার দিন। পবিত্র কোরআনে ‘জুমা’ নামে একটি স্বতন্ত্র সুরাও অবতীর্ণ হয়েছে। জুমার ফজিলত সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। আর বেচা-কেনা বর্জন করো। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে।’ (সুরা জুমা, আয়াত : ৯)

হাদিস শরিফেও দিনটি সম্পর্কে একাধিক বর্ণনা রয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘সূর্য যে সব দিন উদিত হয় অর্থাৎ দিনগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম দিন হলো জুমার দিন। এই দিন আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিন তাকে জান্নাতে দাখিল করা হয়েছে। এই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে। কিয়ামতও সংঘটিত হবে এই দিনেই।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৮৫৪)

বিখ্যাত সাহাবি হজরত সালমান ফারসি (রা.) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করবে, সাধ্যমতো পরিচ্ছন্নতা অর্জন করবে, তেল ব্যবহার করবে বা নিজের ঘরে থাকা আতর মাখবে, এরপর জুমার দিকে বের হবে, (মসজিদে গিয়ে একসাথে থাকা) দুইজনের মাঝে গিয়ে বসবে না, যত রাকাত সম্ভব নামাজ পড়বে, এরপর ইমাম যখন খুতবা দেন তখন চুপ থাকবে। যে কেউই এসব করবে তাকেই এই জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত মাফ করা হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৩)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) আরও বলেন, রাসুল (সা.)বলেছেন, ‘এক জুমা থেকে আরেক জুমা মধ্যবর্তী সময়ের (গোনাহের) জন্য কাফ্ফারা (পাপমোচনকারী), যদি কাবিরা গোনাহ না করা হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৩৩)

এজন্য আমাদের উচিত হবে জুমার নামাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া এবং ওই দিন আগে আগে মসজিদে গিয়ে নামাজের জন্য অপেক্ষা করা। এ প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। সবার আগে আগমনকারীর নামে একটি মোটাতাজা উট কোরবানির সওয়াব লেখা হয়। এরপর আগমনকারীর নামে একটি গাভী কোরবানির সওয়াব লিখা হয়। এরপর আগমনকারীর নামে মুরগি দানের সওয়াব লিখা হয়। অতঃপর ইমাম বের হলে ফেরেশতারা লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনতে থাকেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯২৯)

এখন প্রশ্ন হলো- এত অধিক ফজিলত হওয়া সত্ত্বেও বৃষ্টি কিংবা প্রাকৃতিক যে কোনও দুর্যোগে অনেক সময় ঘর থেকে বের হয়ে মসজিদে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং জুমার নামাজ ছুটে যায়। আর যেহেতু জুমার নামাজে জামাত অপরিহার্য, সেহেতু ঘরে একাকী পড়ারও সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে করণীয় কী?

এর উত্তর হলো- অতিবৃষ্টির কারণে জুমার জন্য মসজিদে যেতে না পারলে নিয়ম হলো, একাকী জোহর নামাজ পড়ে নেওয়া; নিজেরা বাড়িতে জুমার জামাত অথবা জোহরের জামাতও না করা। কিন্তু কেউ যদি আজান ও খুতবাসহ ন্যূনতম চারজন মিলে ঘরেও জুমা পড়ে নেয়, তাহলে জুমা সহি হওয়ার ন্যূনতম শর্ত পাওয়া যাওয়ার কারণে সেটি আদায় হয়ে যাবে এবং তাদেরকে আর ওই দিনের জোহর পড়তে হবে না। যদিও সেটি সঠিক কাজ হবে না। (আযযাখিরাতুল বুরহানিয়া ২/৩৯৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৪৪ ও আদ্দুররুল মুখতার ২/১৫১)।