০৭:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শোকের মিছিলে কারবালা স্মরণ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০২:৪৩:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫
  • ৩৭ Time View

আশুরার দিনে কারবালার স্মরণে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তাজিয়া মিছিল করেছে শিয়া মুসলমানরা।

রোববার সকালে পুরান ঢাকার হোসাইনী দালানে জড়ো হয় হাজারো মানুষ। সকাল ১০টায় হোসাইনী দালানের ইমামবাড়া থেকে যখন প্রধান তাজিয়া মিছিলটি শুরু হয়, তখন সেই মিছিলে অংশ নেয় বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ।

ঢাকার পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী এবারও এই শোকের মিছিলে লাঠি, বর্শা, ছুরি, বল্লম, তলোয়ারের মত ধারালো অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ ছিল।

মিছিলে আংশগ্রহণকারীদের পরনে কালো পোশাক, মাথায় কালো ফেট্টি, কারও হাতে আবার ঝালর দেওয়া লাল, কালো, সোনালি রংয়ের ঝাণ্ডা দেখা গেছে।

তাজিয়া মিছিলে কারবালা স্মরণে কালো মখমলের চাঁদোয়ার নিচে কয়েকজন বহন করেন ইমাম হোসেনের (রা.) প্রতীকী কফিন। মিছিলের সামনে ছিল ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেনের দুটি প্রতীকী ঘোড়াও।

খালি পায়ে, বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতম তুলে মিছিলটি ইমামবাড়া উত্তর গেইট থেকে বের হয়ে হোসাইনী দালান রোড, বকশীবাজার লেন, আলিয়া মাদ্রাসা রোড, বকশীবাজার (কলপাড়) মোড়, উমেশ দত্ত রোড, উর্দু রোড মোড়, হরনাথ ঘোষ রোড, লালবাড় চৌরাস্তা মোড়, গোর-এ-শহীদ মাজার মোড়, এতিমখানা মোড় হয়ে সামনে দিকে এগিয়ে যায়।

পথে আজিমপুর, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত ঘুরে, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় হয়ে ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে প্রতীকী ‘কারবালা’ প্রান্তে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে শোকের এই মিছিলটির।

তাজিয়া মিছিলের সামনে-পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সতর্ক উপস্থিতি দেখা গেছে।

তবে আশুরার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে শনিবার মাগরিবের নামাজের পর থেকে।

৪৯ বছর ধরে তাজিয়া মিছিলে অংশ নেওয়া হাজারী বাগের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বয়স যখন ১৪ দিন, তখন থেকে মা আর আব্বা আমাকে এখানে নিয়ে আসে, বড় হওয়ার পর থেকে আমি আসি। যত বালাই মসিব্বত থাকুক এখানে আসা আমার কোনদিন মিস হয় নাই। এই উসিলায় আল্লাহ আমাদের ভালো রেখেছে।”

সেতারা বেগম বলেন, “আমার পয়দা হইছে দালানে, ছোট থেকে এখনও সব সময় আসি, পনের দিনে আসি, সপ্তাহে আসি। আর মহরম মাসে থাকি এখানেই। বিয়ের পর থেকে ৩০-৩৫ বছর ধরে সপ্তাহে বা পনের দিনে একবার আসি। মাওলা আমাদের সব।”

শিয়া মুসলমানদের পাশাপাশি সনাতন ধর্মের কিছু মানুষকেও মিছিলে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে ৬৫ বছর বসয়ী যতীন্দ্র দাশ জানালেন তিনি প্রায় ৫০ বছর ধরে তাজিয়া মিছিলে অংশ নিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, “আমাদের মানত ছিল তাই আসি। আমি পরিবার নিয়ে আসছি। আমার মা বাবা আমাকে নিয়ে আসত। মেয়ে ও বউকে নিয়ে আমি আসছি।”

হোসাইনী দালানের ইমামবাড়া ছাড়াও বড় কাটরা, বিবিকা রওজা, মোহাম্মদপুরের বিহারী ক্যাম্প, শিয়া মসজিদ, মিরপুর পল্লবী বিহারী ক্যাম্পসহ ঢাকার আরো কয়েকটি জায়গায় আশুরার আনুষ্ঠানিকতা পালন করছেন শিয়া মুসলমানরা।

১০ মহররম মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক। হিজরি ৬১তম বর্ষের (৬৮০ খ্রিস্টাব্দ) এই দিনে হজরত মুহাম্মদের (স.) দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন। মুসলমানরা, বিশেষ করে শিয়া মুসলমানরা ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেন

২০১৫ সালে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির মধ্যে ইমামবাড়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনার পর থেকে আশুরায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি বাড়ানো হয়।

কোভিড মহামারীর কারণে বাংলাদেশে দুই বছর বন্ধ ছিল তাজিয়া মিছিল; এরপর ২০২২ সাল থেকে মিছিল করার অনুমতি পায় শিয়া সম্প্রদায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

News Editor

জনপ্রিয় খবর

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের শুভেচ্ছা

শোকের মিছিলে কারবালা স্মরণ

Update Time : ০২:৪৩:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ জুলাই ২০২৫

আশুরার দিনে কারবালার স্মরণে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তাজিয়া মিছিল করেছে শিয়া মুসলমানরা।

রোববার সকালে পুরান ঢাকার হোসাইনী দালানে জড়ো হয় হাজারো মানুষ। সকাল ১০টায় হোসাইনী দালানের ইমামবাড়া থেকে যখন প্রধান তাজিয়া মিছিলটি শুরু হয়, তখন সেই মিছিলে অংশ নেয় বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ।

ঢাকার পুলিশ প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী এবারও এই শোকের মিছিলে লাঠি, বর্শা, ছুরি, বল্লম, তলোয়ারের মত ধারালো অস্ত্র বহন নিষিদ্ধ ছিল।

মিছিলে আংশগ্রহণকারীদের পরনে কালো পোশাক, মাথায় কালো ফেট্টি, কারও হাতে আবার ঝালর দেওয়া লাল, কালো, সোনালি রংয়ের ঝাণ্ডা দেখা গেছে।

তাজিয়া মিছিলে কারবালা স্মরণে কালো মখমলের চাঁদোয়ার নিচে কয়েকজন বহন করেন ইমাম হোসেনের (রা.) প্রতীকী কফিন। মিছিলের সামনে ছিল ইমাম হাসান ও ইমাম হোসেনের দুটি প্রতীকী ঘোড়াও।

খালি পায়ে, বুক চাপড়ে ‘হায় হোসেন, হায় হোসেন’ মাতম তুলে মিছিলটি ইমামবাড়া উত্তর গেইট থেকে বের হয়ে হোসাইনী দালান রোড, বকশীবাজার লেন, আলিয়া মাদ্রাসা রোড, বকশীবাজার (কলপাড়) মোড়, উমেশ দত্ত রোড, উর্দু রোড মোড়, হরনাথ ঘোষ রোড, লালবাড় চৌরাস্তা মোড়, গোর-এ-শহীদ মাজার মোড়, এতিমখানা মোড় হয়ে সামনে দিকে এগিয়ে যায়।

পথে আজিমপুর, নিউ মার্কেট, নীলক্ষেত ঘুরে, সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় হয়ে ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে প্রতীকী ‘কারবালা’ প্রান্তে গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে শোকের এই মিছিলটির।

তাজিয়া মিছিলের সামনে-পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সতর্ক উপস্থিতি দেখা গেছে।

তবে আশুরার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে শনিবার মাগরিবের নামাজের পর থেকে।

৪৯ বছর ধরে তাজিয়া মিছিলে অংশ নেওয়া হাজারী বাগের বাসিন্দা মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার বয়স যখন ১৪ দিন, তখন থেকে মা আর আব্বা আমাকে এখানে নিয়ে আসে, বড় হওয়ার পর থেকে আমি আসি। যত বালাই মসিব্বত থাকুক এখানে আসা আমার কোনদিন মিস হয় নাই। এই উসিলায় আল্লাহ আমাদের ভালো রেখেছে।”

সেতারা বেগম বলেন, “আমার পয়দা হইছে দালানে, ছোট থেকে এখনও সব সময় আসি, পনের দিনে আসি, সপ্তাহে আসি। আর মহরম মাসে থাকি এখানেই। বিয়ের পর থেকে ৩০-৩৫ বছর ধরে সপ্তাহে বা পনের দিনে একবার আসি। মাওলা আমাদের সব।”

শিয়া মুসলমানদের পাশাপাশি সনাতন ধর্মের কিছু মানুষকেও মিছিলে দেখা গেছে। তাদের মধ্যে ৬৫ বছর বসয়ী যতীন্দ্র দাশ জানালেন তিনি প্রায় ৫০ বছর ধরে তাজিয়া মিছিলে অংশ নিয়ে আসছেন।

তিনি বলেন, “আমাদের মানত ছিল তাই আসি। আমি পরিবার নিয়ে আসছি। আমার মা বাবা আমাকে নিয়ে আসত। মেয়ে ও বউকে নিয়ে আমি আসছি।”

হোসাইনী দালানের ইমামবাড়া ছাড়াও বড় কাটরা, বিবিকা রওজা, মোহাম্মদপুরের বিহারী ক্যাম্প, শিয়া মসজিদ, মিরপুর পল্লবী বিহারী ক্যাম্পসহ ঢাকার আরো কয়েকটি জায়গায় আশুরার আনুষ্ঠানিকতা পালন করছেন শিয়া মুসলমানরা।

১০ মহররম মুসলিম বিশ্বে ত্যাগ ও শোকের প্রতীক। হিজরি ৬১তম বর্ষের (৬৮০ খ্রিস্টাব্দ) এই দিনে হজরত মুহাম্মদের (স.) দৌহিত্র হজরত ইমাম হোসেন (রা.) ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে শহীদ হন। মুসলমানরা, বিশেষ করে শিয়া মুসলমানরা ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেন

২০১৫ সালে তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির মধ্যে ইমামবাড়ায় জঙ্গি হামলার ঘটনার পর থেকে আশুরায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি বাড়ানো হয়।

কোভিড মহামারীর কারণে বাংলাদেশে দুই বছর বন্ধ ছিল তাজিয়া মিছিল; এরপর ২০২২ সাল থেকে মিছিল করার অনুমতি পায় শিয়া সম্প্রদায়।