০৭:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের ৮ লাখ রোহিঙ্গা পাচ্ছেন কোরবানির মাংস

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:১৭:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫
  • ২৩ Time View

কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের ১ লাখ ২০ হাজার পরিবারের ৮ লাখ রোহিঙ্গাকে এবারও কোরবানির মাংস বিতরণ করা হচ্ছে। ২৩টির বেশি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) দেওয়া কোরবানির পশুগুলো শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) মাধ্যমে রোহিঙ্গা পরিবারে বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি পরিবার দেড় কেজি করে মাংস পেতে পারে।

আরআরআরসির কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত উখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরের প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার জন্য ১ হাজার ৭০০ গরু, ৩৫০ ছাগল ও ৫০ হাজার কেজি গরু-মহিষের মাংস পাওয়া গেছে। ৭ জুন (ঈদুল আজহার দিন) সকালে কোরবানির পশুগুলো জবাই করে রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়শিবিরে বিভিন্ন সেবা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত বহু এনজিও তহবিল সংকটে রয়েছে। এ কারণে অনেকের পক্ষে রোহিঙ্গাদের জন্য কোরবানির পশু কিনে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ২৩টির বেশি এনজিও শুধু উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে থাকা প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার জন্য কোরবানির ১ হাজার ৭০০ গরু, ৩৫০ ছাগল ও ৫০ হাজার কেজি মাংস সরবরাহ করবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে আশ্রয়শিবিরের মাঝিদের (রোহিঙ্গা নেতা) মাধ্যমে মাংসগুলো ঈদের দিন সকালে রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে বণ্টন করে দেওয়া হবে। বেসরকারি কোনো সংস্থা রাজি না হওয়ায় টেকনাফের আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গার জন্য কোরবানির পশু কিংবা মাংস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, যে পরিমাণ পশু ও মাংস পাওয়া গেছে, তাতে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবার এক কেজির কিছুটা বেশি মাংস পেতে পারে।

এ নিয়ে টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। টেকনাফের শালবাগান আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জামাল হোসেন বলেন, গত কোরবানির ঈদেও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এবারও মাংস থেকে বঞ্চিত হওয়ার খবরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

একই আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা আবদুল জব্বার বলেন, রোহিঙ্গাদের বহু আত্মীয়স্বজন সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। তাঁরা কোরবানির পশু কেনার জন্য আশ্রয়শিবিরে থাকা আত্মীয়স্বজনের (রোহিঙ্গা পরিবার) জন্য টাকা পাঠাচ্ছেন। সেই টাকায় বেশ কিছু রোহিঙ্গা পরিবার টেকনাফ ও হ্নীলার পশুর বাজার থেকে ৩০-৩৫টি গরু-মহিষ কিনে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই আশ্রয়শিবিরে প্রায় ২২ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস। গত বছর বিদেশ থেকে পাঠানো স্বজনদের টাকায় এখানকার রোহিঙ্গারা ৭০টির বেশি গরু-মহিষ কোরবানি দিয়েছিলেন।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ২০২০ সালে ৩৩ আশ্রয়শিবিরে কোরবানির জন্য প্রায় পাঁচ হাজার গরু-মহিষ বিতরণ করা হয়েছিল। ২০২২ সালে ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নানা অজুহাতে পশুর সংখ্যা অর্ধেক কমিয়ে ৩ হাজারে আনা হয়। এখন পশুর সংখ্যা আরও অর্ধেক কমে গেল।

আরআরআরসি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, কোরবানির মাংস বণ্টন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তদারকির জন্য প্রতিটি আশ্রয়শিবিরে ক্যাম্প ইনচার্জের তত্ত্বাবধানে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির লোকজন মাঝিদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা পরিবারে মাংস পৌঁছে দেবেন। ঈদের দিন বৃষ্টি হলে পশু জবাইয়ের বিকল্প ব্যবস্থা, বর্জ্য অপসারণ ও কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বছর পশুর চামড়াগুলো উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এতিমখানায় বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

News Editor

জনপ্রিয় খবর

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের শুভেচ্ছা

উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের ৮ লাখ রোহিঙ্গা পাচ্ছেন কোরবানির মাংস

Update Time : ০৭:১৭:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয়শিবিরের ১ লাখ ২০ হাজার পরিবারের ৮ লাখ রোহিঙ্গাকে এবারও কোরবানির মাংস বিতরণ করা হচ্ছে। ২৩টির বেশি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) দেওয়া কোরবানির পশুগুলো শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের (আরআরআরসি) মাধ্যমে রোহিঙ্গা পরিবারে বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি পরিবার দেড় কেজি করে মাংস পেতে পারে।

আরআরআরসির কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, আজ বুধবার বিকেল পর্যন্ত উখিয়ার ২৩টি আশ্রয়শিবিরের প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার জন্য ১ হাজার ৭০০ গরু, ৩৫০ ছাগল ও ৫০ হাজার কেজি গরু-মহিষের মাংস পাওয়া গেছে। ৭ জুন (ঈদুল আজহার দিন) সকালে কোরবানির পশুগুলো জবাই করে রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আশ্রয়শিবিরে বিভিন্ন সেবা ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত বহু এনজিও তহবিল সংকটে রয়েছে। এ কারণে অনেকের পক্ষে রোহিঙ্গাদের জন্য কোরবানির পশু কিনে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে ২৩টির বেশি এনজিও শুধু উখিয়ার বিভিন্ন আশ্রয়শিবিরে থাকা প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার জন্য কোরবানির ১ হাজার ৭০০ গরু, ৩৫০ ছাগল ও ৫০ হাজার কেজি মাংস সরবরাহ করবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) তত্ত্বাবধানে আশ্রয়শিবিরের মাঝিদের (রোহিঙ্গা নেতা) মাধ্যমে মাংসগুলো ঈদের দিন সকালে রোহিঙ্গাদের ঘরে ঘরে বণ্টন করে দেওয়া হবে। বেসরকারি কোনো সংস্থা রাজি না হওয়ায় টেকনাফের আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গার জন্য কোরবানির পশু কিংবা মাংস সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। রোহিঙ্গা নেতারা বলেন, যে পরিমাণ পশু ও মাংস পাওয়া গেছে, তাতে প্রতিটি রোহিঙ্গা পরিবার এক কেজির কিছুটা বেশি মাংস পেতে পারে।

এ নিয়ে টেকনাফের রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। টেকনাফের শালবাগান আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা নেতা জামাল হোসেন বলেন, গত কোরবানির ঈদেও টেকনাফের আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গারা কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এবারও মাংস থেকে বঞ্চিত হওয়ার খবরে রোহিঙ্গাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।

একই আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা আবদুল জব্বার বলেন, রোহিঙ্গাদের বহু আত্মীয়স্বজন সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বসবাস করেন। তাঁরা কোরবানির পশু কেনার জন্য আশ্রয়শিবিরে থাকা আত্মীয়স্বজনের (রোহিঙ্গা পরিবার) জন্য টাকা পাঠাচ্ছেন। সেই টাকায় বেশ কিছু রোহিঙ্গা পরিবার টেকনাফ ও হ্নীলার পশুর বাজার থেকে ৩০-৩৫টি গরু-মহিষ কিনে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এই আশ্রয়শিবিরে প্রায় ২২ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস। গত বছর বিদেশ থেকে পাঠানো স্বজনদের টাকায় এখানকার রোহিঙ্গারা ৭০টির বেশি গরু-মহিষ কোরবানি দিয়েছিলেন।

বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৪ লাখের বেশি। রোহিঙ্গা নেতারা জানান, ২০২০ সালে ৩৩ আশ্রয়শিবিরে কোরবানির জন্য প্রায় পাঁচ হাজার গরু-মহিষ বিতরণ করা হয়েছিল। ২০২২ সালে ইউক্রেন-রাশিয়ার মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নানা অজুহাতে পশুর সংখ্যা অর্ধেক কমিয়ে ৩ হাজারে আনা হয়। এখন পশুর সংখ্যা আরও অর্ধেক কমে গেল।

আরআরআরসি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, কোরবানির মাংস বণ্টন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তদারকির জন্য প্রতিটি আশ্রয়শিবিরে ক্যাম্প ইনচার্জের তত্ত্বাবধানে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির লোকজন মাঝিদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা পরিবারে মাংস পৌঁছে দেবেন। ঈদের দিন বৃষ্টি হলে পশু জবাইয়ের বিকল্প ব্যবস্থা, বর্জ্য অপসারণ ও কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত বছর পশুর চামড়াগুলো উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এতিমখানায় বিনা মূল্যে বিতরণ করা হয়েছিল।