০৭:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিদ্যালয়ের ভুয়া শাখায় ৫ শিক্ষক, সরকারি বেতন নিয়েছেন দেড় কোটি টাকা

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:২৬:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১৬ Time View

ভাঙ্গুড়া জরিনা রহিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা সদরের ভাঙ্গুড়া জরিনা রহিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভুয়া শাখা দেখিয়ে পাঁচ জন শিক্ষক দীর্ঘ এক যুগ ধরে চাকরি করছেন। এ সময়ে তারা সরকারি কোষাগার থেকে তুলেছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা বেতন। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে এ অনিয়মের সত্যতা মিলেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড যাচাই করে জানায়, বিদ্যালয়ের অতিরিক্ত শাখার অনুমোদনের কাগজপত্র ভুয়া। এ ঘটনায় মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিও বন্ধ ও নিয়োগদাতা প্রধান শিক্ষক শওকত আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।

কীভাবে শুরু হলো অনিয়ম

বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালে। ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী কিছু শাখা চালুর জন্য প্রাথমিক অনুমতি নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেন। তবে তিনি ২০০৩ সালে অবসরে যাওয়ার আগে শাখাগুলোর চূড়ান্ত অনুমোদন আর সম্পন্ন করেননি।

২০০৪ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন শওকত আলী। কাম্য যোগ্যতার অভাবে তিনি দীর্ঘদিন বেতনবিহীন ছিলেন। পরে কয়েকজন শিক্ষক অবসরে গেলে নতুন নিয়োগের উদ্যোগ নেন তিনি। কিন্তু অনুমোদন না থাকায় জেলা শিক্ষা অফিস তার আবেদন ফেরত দেয়।

এ অবস্থায় শওকত আলী নিয়োগ বাণিজ্যের পথ খুঁজতে ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ভুয়া অনুমোদনপত্র তৈরি করেন। এসব কাগজে কম্পিউটার ফন্ট ব্যবহৃত হওয়ায় বিষয়টি শুরু থেকেই সন্দেহজনক ছিল।

ভুয়া কাগজে নিয়োগ ও এমপিও

ভুয়া অনুমোদনপত্রের মাধ্যমে ২০১২ সালে বিএম গুলজার হোসেন ও রেজাউল করিম, ২০১৪ সালে নওশাদুল ইসলামকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। এ ছাড়া একরাম হোসাইন ও সিদ্দিকুর রহমানও ওই ভুয়া শাখায় শিক্ষকতা করছেন।

প্রথম দিকে জেলা শিক্ষা অফিস তাদের এমপিও আটকে দিলেও পরে নানা মহল ম্যানেজ করে এমপিও সুবিধা নেন এসব শিক্ষক। ফলে গত এক যুগে প্রায় দেড় কোটি টাকা সরকারি বেতন ভুয়া শাখার নামে তোলা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষকের বিতর্কিত ভূমিকা

দুর্নীতি ও মামলার কারণে ২০১৭ সালে শওকত আলীকে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে বহিষ্কার করে ম্যানেজিং কমিটি। তবে আট বছর পরে আদালতের মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহার করে আবারও এ বছরের মে মাসে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ফিরে আসেন তিনি।

এ অবস্থায় বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। তদন্তে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড ভুয়া কাগজপত্রের সত্যতা নিশ্চিত করে।

সংশ্লিষ্টরা যা জানিয়েছেন

অভিযোগ প্রসঙ্গে ভুয়া শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক নওশাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কিছু বলার নেই, যা বলার প্রধান শিক্ষক বলবেন।’

প্রধান শিক্ষক শওকত আলী দাবি করেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তিনি দায় চাপান সাবেক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলীর ওপর। ১৯৯৫ সালের কম্পিউটার-লিখিতপত্রের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুন নাহার গণমাধ্যমকে জানান, মন্ত্রণালয়ের চিঠির বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।

অন্যদিকে মাউশির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

News Editor

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিসিবি পরিচালক আসিফ আকবর

বিদ্যালয়ের ভুয়া শাখায় ৫ শিক্ষক, সরকারি বেতন নিয়েছেন দেড় কোটি টাকা

Update Time : ১১:২৬:১৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভাঙ্গুড়া জরিনা রহিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা সদরের ভাঙ্গুড়া জরিনা রহিম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভুয়া শাখা দেখিয়ে পাঁচ জন শিক্ষক দীর্ঘ এক যুগ ধরে চাকরি করছেন। এ সময়ে তারা সরকারি কোষাগার থেকে তুলেছেন প্রায় দেড় কোটি টাকা বেতন। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্তে এ অনিয়মের সত্যতা মিলেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড যাচাই করে জানায়, বিদ্যালয়ের অতিরিক্ত শাখার অনুমোদনের কাগজপত্র ভুয়া। এ ঘটনায় মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে (মাউশি) নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এমপিও বন্ধ ও নিয়োগদাতা প্রধান শিক্ষক শওকত আলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছে।

কীভাবে শুরু হলো অনিয়ম

বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৯ সালে। ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী কিছু শাখা চালুর জন্য প্রাথমিক অনুমতি নিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেন। তবে তিনি ২০০৩ সালে অবসরে যাওয়ার আগে শাখাগুলোর চূড়ান্ত অনুমোদন আর সম্পন্ন করেননি।

২০০৪ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন শওকত আলী। কাম্য যোগ্যতার অভাবে তিনি দীর্ঘদিন বেতনবিহীন ছিলেন। পরে কয়েকজন শিক্ষক অবসরে গেলে নতুন নিয়োগের উদ্যোগ নেন তিনি। কিন্তু অনুমোদন না থাকায় জেলা শিক্ষা অফিস তার আবেদন ফেরত দেয়।

এ অবস্থায় শওকত আলী নিয়োগ বাণিজ্যের পথ খুঁজতে ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ভুয়া অনুমোদনপত্র তৈরি করেন। এসব কাগজে কম্পিউটার ফন্ট ব্যবহৃত হওয়ায় বিষয়টি শুরু থেকেই সন্দেহজনক ছিল।

ভুয়া কাগজে নিয়োগ ও এমপিও

ভুয়া অনুমোদনপত্রের মাধ্যমে ২০১২ সালে বিএম গুলজার হোসেন ও রেজাউল করিম, ২০১৪ সালে নওশাদুল ইসলামকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন তিনি। এ ছাড়া একরাম হোসাইন ও সিদ্দিকুর রহমানও ওই ভুয়া শাখায় শিক্ষকতা করছেন।

প্রথম দিকে জেলা শিক্ষা অফিস তাদের এমপিও আটকে দিলেও পরে নানা মহল ম্যানেজ করে এমপিও সুবিধা নেন এসব শিক্ষক। ফলে গত এক যুগে প্রায় দেড় কোটি টাকা সরকারি বেতন ভুয়া শাখার নামে তোলা হয়েছে।

প্রধান শিক্ষকের বিতর্কিত ভূমিকা

দুর্নীতি ও মামলার কারণে ২০১৭ সালে শওকত আলীকে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে বহিষ্কার করে ম্যানেজিং কমিটি। তবে আট বছর পরে আদালতের মাধ্যমে মামলা প্রত্যাহার করে আবারও এ বছরের মে মাসে প্রধান শিক্ষক হিসেবে ফিরে আসেন তিনি।

এ অবস্থায় বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। তদন্তে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড ভুয়া কাগজপত্রের সত্যতা নিশ্চিত করে।

সংশ্লিষ্টরা যা জানিয়েছেন

অভিযোগ প্রসঙ্গে ভুয়া শাখায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক নওশাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কিছু বলার নেই, যা বলার প্রধান শিক্ষক বলবেন।’

প্রধান শিক্ষক শওকত আলী দাবি করেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে তিনি দায় চাপান সাবেক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলীর ওপর। ১৯৯৫ সালের কম্পিউটার-লিখিতপত্রের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুন নাহার গণমাধ্যমকে জানান, মন্ত্রণালয়ের চিঠির বিষয়ে আমরা অবগত হয়েছি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন আছে।

অন্যদিকে মাউশির একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা মন্তব্য করতে রাজি হননি।