০৭:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দিনের পর দিন অনাহারে: ডব্লিউএফপি

  • Reporter Name
  • Update Time : ১২:৫৬:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
  • ১৪ Time View

গাজার ৯০ হাজার নারী-শিশুর অপুষ্টিজনিত জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। “আমার পুরো সামরিক জীবনে, আমি কখনোই এমন নিষ্ঠুরতা ও অহেতুক বলপ্রয়োগ দেখিনি, যেমনটা গাজায় আইডিএফ ও মার্কিন ঠিকাদারদের মাধ্যমে ঘটতে দেখেছি,” বলেন সাবেক এক সেনা। ছবি: রয়টার্স

গাজার তিন ভাগের প্রায় এক ভাগ মানুষকে দিনের পর দিন কিছু না খেয়েই কাটাতে হচ্ছে জানিয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।

সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “পুষ্টিহীনতা বাড়ছে এবং ৯০ হাজার নারী-শিশুর জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।”

বিবিসি লিখেছে, চলতি সপ্তাহে গাজায় অনাহারের আশঙ্কা আরও বেড়েছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অপুষ্টিতে শুক্রবার ৯ জন মারা গেছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অপুষ্টিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২২ জনে।

গাজায় যেকোনো কিছুর সরবরাহ প্রশ্নে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। তবে এ পরিস্থিতির জন্য হামাসকে দায়ী করে ইহুদি দেশটি বলছে, মানবিক সহায়তায় কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

এক ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা শুক্রবার বলেন, আকাশপথে গাজায় সহায়তা পাঠানোর অনুমতি শিগগিরই দেওয়া হতে পারে। যদিও এটি খুবই অকার্যকর পদ্ধতি বলে আগেই সতর্ক করেছে সাহায্য সংস্থাগুলো।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এখন সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান। তবে এক জ্যেষ্ঠ জর্ডানীয় কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাদের সামরিক বাহিনী এখনো ইসরায়েলের কাছ থেকে অনুমতি পায়নি।

এই উদ্যোগকে ‘ইসরায়েল সরকারের নিষ্ক্রিয়তা থেকে মনোযোগ সরানোর প্রচেষ্টা’ বলে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ।

বিবিসি লিখেছে, এই পদক্ষেপ এমন সময়ে নেওয়া হচ্ছে, যখন গাজায় মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ তুঙ্গে। গাজায় সহায়তা সরবরাহের প্রতিবন্ধকতা ‘অবিলম্বে তুলে নিতে’ ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার যৌথ বিবৃতি দিয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য।

তারা বলেছে, “আমরা গাজায় যা দেখছি, তা এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়; এর তাৎক্ষণিক অবসান এবং যুদ্ধের শেষ হওয়া প্রয়োজন। ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে।

“নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা আটকানো গ্রহণযোগ্য নয়।”

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এত উদাসীনতা, নিষ্ক্রিয়তা এবং মানবিকতা ও সত্যের অভাব আমি ব্যাখ্যা করতে পারছি না।”

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ২৭ মে থেকে জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন ব্যবস্থার বিকল্প যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ শুরু করে, সেদিন থেকে খাবার পেতে গিয়ে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

জিএইচএফের হয়ে গত মে ও জুন মাসে কাজ করা এক মার্কিন নিরাপত্তা ঠিকাদার শুক্রবার বিবিসিকে বলেন, তিনি ‘প্রশ্নাতীতভাবে যুদ্ধাপরাধ’ দেখেছেন।

ত্রাণকেন্দ্রে অনাহারী মানুষের সংখ্যা বাড়লেও পর্যাপ্ত সহায়তা মিলছে না।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা অ্যান্থনি অ্যাগুইলার বলেন, তিনি দেখেছেন- খাবার বিতরণ কেন্দ্রে আইডিএফ ও মার্কিন ঠিকাদাররা সাধারণ নাগরিকদের ওপর সরাসরি গুলি, মর্টার, কামান ও ট্যাংকের গোলাবর্ষণ করেছে।

তিনি বলেন, “আমার পুরো সামরিক জীবনে, আমি কখনোই এমন নিষ্ঠুরতা ও অহেতুক বলপ্রয়োগ দেখিনি, যেমনটা গাজায় আইডিএফ ও মার্কিন ঠিকাদারদের মাধ্যমে ঘটতে দেখেছি।”

এ অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ দাবি করে জিএইচএফ বলেছে, যিনি এই অভিযোগ তুলেছেন, সেই ক্ষুব্ধ সাবেক ঠিকাদারকে অসদাচরণের জন্য এক মাস আগে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল তাদের আলোচক দলকে কাতার থেকে ফেরানোয় নতুন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তির আলোচনা অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, হামাস আসলে কোনো চুক্তি করতে চায়নি।

“আমি মনে করি তারা মরতে চায়।”

যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে হামাস।

ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রায়ই গুলিতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে গাজাবাসীকে।

হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বিবিসির গাজা প্রতিনিধিকে বলেন, মধ্যস্থতাকারীরা স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটিকে জানিয়েছে- আলোচনা এখনও ভেস্তে যায়নি। ইসরায়েলি প্রতিনিধি দলের আগামী সপ্তাহে দোহায় ফেরার কথা রয়েছে।

হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়, যাতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।

তারপর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫৯ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বিবিসি লিখেছে, মার্চের শুরুতে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। তার দুই সপ্তাহ বাদে হামাসের বিরুদ্ধে ফের সামরিক অভিযান শুরু করে ইহুদি দেশটি। ফলে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যায়। ইসরায়েলের ভাষ্য, তারা হামাসকে চাপে ফেলে তাদের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করতে চায়।

যদিও দুই মাস পর অবরোধ কিছুটা শিথিল হয়, বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষের সতর্কতার কারণে, খাবার, ওষুধ ও জ্বালানির সংকট আরও গভীর হয়েছে।

বৈশ্বিক বিশেষজ্ঞদের দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার মধ্যে প্রায় দুই মাস পরে অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করা হয়েছে, তবুও খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির ঘাটতি বেড়ে গেছে।

গাজায় যেকোনো কিছুর সরবরাহ প্রশ্নে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল।

গাজার জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই বহুবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ৯০ শতাংশ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

ফ্রান্স বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছে যে- তারা সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। এ ঘোষণায় ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুব্ধ হয়েছে।

পরদিন যুক্তরাজ্যের এক-তৃতীয়াংশের বেশি এমপি দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে চিঠি লিখে একই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে কিয়ার স্টারমার ইঙ্গিত দিয়েছেন, এমন সিদ্ধান্ত এখনই নেওয়া যাবে না। এটিকে একটি বিস্তৃত পরিকল্পনার অংশ হতে হবে, যা শেষ পর্যন্ত দ্বিরাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানে পৌঁছাবে; যেখানে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল পাশাপাশি থাকবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

News Editor

জনপ্রিয় খবর

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের শুভেচ্ছা

গাজায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দিনের পর দিন অনাহারে: ডব্লিউএফপি

Update Time : ১২:৫৬:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

গাজার ৯০ হাজার নারী-শিশুর অপুষ্টিজনিত জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। “আমার পুরো সামরিক জীবনে, আমি কখনোই এমন নিষ্ঠুরতা ও অহেতুক বলপ্রয়োগ দেখিনি, যেমনটা গাজায় আইডিএফ ও মার্কিন ঠিকাদারদের মাধ্যমে ঘটতে দেখেছি,” বলেন সাবেক এক সেনা। ছবি: রয়টার্স

গাজার তিন ভাগের প্রায় এক ভাগ মানুষকে দিনের পর দিন কিছু না খেয়েই কাটাতে হচ্ছে জানিয়ে সতর্ক করেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।

সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে, “পুষ্টিহীনতা বাড়ছে এবং ৯০ হাজার নারী-শিশুর জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।”

বিবিসি লিখেছে, চলতি সপ্তাহে গাজায় অনাহারের আশঙ্কা আরও বেড়েছে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অপুষ্টিতে শুক্রবার ৯ জন মারা গেছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর অপুষ্টিতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২২ জনে।

গাজায় যেকোনো কিছুর সরবরাহ প্রশ্নে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল। তবে এ পরিস্থিতির জন্য হামাসকে দায়ী করে ইহুদি দেশটি বলছে, মানবিক সহায়তায় কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।

এক ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা শুক্রবার বলেন, আকাশপথে গাজায় সহায়তা পাঠানোর অনুমতি শিগগিরই দেওয়া হতে পারে। যদিও এটি খুবই অকার্যকর পদ্ধতি বলে আগেই সতর্ক করেছে সাহায্য সংস্থাগুলো।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এখন সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ নিচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্ডান। তবে এক জ্যেষ্ঠ জর্ডানীয় কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, তাদের সামরিক বাহিনী এখনো ইসরায়েলের কাছ থেকে অনুমতি পায়নি।

এই উদ্যোগকে ‘ইসরায়েল সরকারের নিষ্ক্রিয়তা থেকে মনোযোগ সরানোর প্রচেষ্টা’ বলে বর্ণনা করেছে জাতিসংঘ।

বিবিসি লিখেছে, এই পদক্ষেপ এমন সময়ে নেওয়া হচ্ছে, যখন গাজায় মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ তুঙ্গে। গাজায় সহায়তা সরবরাহের প্রতিবন্ধকতা ‘অবিলম্বে তুলে নিতে’ ইসরায়েলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শুক্রবার যৌথ বিবৃতি দিয়েছে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য।

তারা বলেছে, “আমরা গাজায় যা দেখছি, তা এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়; এর তাৎক্ষণিক অবসান এবং যুদ্ধের শেষ হওয়া প্রয়োজন। ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে।

“নাগরিকদের জন্য প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা আটকানো গ্রহণযোগ্য নয়।”

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এত উদাসীনতা, নিষ্ক্রিয়তা এবং মানবিকতা ও সত্যের অভাব আমি ব্যাখ্যা করতে পারছি না।”

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ২৭ মে থেকে জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন ব্যবস্থার বিকল্প যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ শুরু করে, সেদিন থেকে খাবার পেতে গিয়ে এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

জিএইচএফের হয়ে গত মে ও জুন মাসে কাজ করা এক মার্কিন নিরাপত্তা ঠিকাদার শুক্রবার বিবিসিকে বলেন, তিনি ‘প্রশ্নাতীতভাবে যুদ্ধাপরাধ’ দেখেছেন।

ত্রাণকেন্দ্রে অনাহারী মানুষের সংখ্যা বাড়লেও পর্যাপ্ত সহায়তা মিলছে না।

অবসরপ্রাপ্ত সেনা অ্যান্থনি অ্যাগুইলার বলেন, তিনি দেখেছেন- খাবার বিতরণ কেন্দ্রে আইডিএফ ও মার্কিন ঠিকাদাররা সাধারণ নাগরিকদের ওপর সরাসরি গুলি, মর্টার, কামান ও ট্যাংকের গোলাবর্ষণ করেছে।

তিনি বলেন, “আমার পুরো সামরিক জীবনে, আমি কখনোই এমন নিষ্ঠুরতা ও অহেতুক বলপ্রয়োগ দেখিনি, যেমনটা গাজায় আইডিএফ ও মার্কিন ঠিকাদারদের মাধ্যমে ঘটতে দেখেছি।”

এ অভিযোগকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ দাবি করে জিএইচএফ বলেছে, যিনি এই অভিযোগ তুলেছেন, সেই ক্ষুব্ধ সাবেক ঠিকাদারকে অসদাচরণের জন্য এক মাস আগে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল তাদের আলোচক দলকে কাতার থেকে ফেরানোয় নতুন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি বিনিময় চুক্তির আলোচনা অনিশ্চয়তায় পড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন, হামাস আসলে কোনো চুক্তি করতে চায়নি।

“আমি মনে করি তারা মরতে চায়।”

যুক্তরাষ্ট্রের এমন মন্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে হামাস।

ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রায়ই গুলিতে প্রাণ হারাতে হচ্ছে গাজাবাসীকে।

হামাসের এক জ্যেষ্ঠ নেতা বিবিসির গাজা প্রতিনিধিকে বলেন, মধ্যস্থতাকারীরা স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটিকে জানিয়েছে- আলোচনা এখনও ভেস্তে যায়নি। ইসরায়েলি প্রতিনিধি দলের আগামী সপ্তাহে দোহায় ফেরার কথা রয়েছে।

হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়, যাতে প্রায় ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়।

তারপর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫৯ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

বিবিসি লিখেছে, মার্চের শুরুতে গাজায় ত্রাণ প্রবেশে সম্পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে ইসরায়েল। তার দুই সপ্তাহ বাদে হামাসের বিরুদ্ধে ফের সামরিক অভিযান শুরু করে ইহুদি দেশটি। ফলে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেস্তে যায়। ইসরায়েলের ভাষ্য, তারা হামাসকে চাপে ফেলে তাদের হাতে থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করতে চায়।

যদিও দুই মাস পর অবরোধ কিছুটা শিথিল হয়, বিশ্বজুড়ে দুর্ভিক্ষের সতর্কতার কারণে, খাবার, ওষুধ ও জ্বালানির সংকট আরও গভীর হয়েছে।

বৈশ্বিক বিশেষজ্ঞদের দুর্ভিক্ষের আশঙ্কার মধ্যে প্রায় দুই মাস পরে অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করা হয়েছে, তবুও খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির ঘাটতি বেড়ে গেছে।

গাজায় যেকোনো কিছুর সরবরাহ প্রশ্নে প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে ইসরায়েল।

গাজার জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই বহুবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ৯০ শতাংশ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

ফ্রান্স বৃহস্পতিবার ঘোষণা দিয়েছে যে- তারা সেপ্টেম্বরে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে। এ ঘোষণায় ইসরায়েল ও তার প্রধান মিত্র যুক্তরাষ্ট্র ক্ষুব্ধ হয়েছে।

পরদিন যুক্তরাজ্যের এক-তৃতীয়াংশের বেশি এমপি দেশটির প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারকে চিঠি লিখে একই পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

তবে কিয়ার স্টারমার ইঙ্গিত দিয়েছেন, এমন সিদ্ধান্ত এখনই নেওয়া যাবে না। এটিকে একটি বিস্তৃত পরিকল্পনার অংশ হতে হবে, যা শেষ পর্যন্ত দ্বিরাষ্ট্র ভিত্তিক সমাধানে পৌঁছাবে; যেখানে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল পাশাপাশি থাকবে।