আগেই দুই ম্যাচের তুলনায় শেষ টি-টোয়েন্টির উইকেট ছিল ব্যাটারদের অনুকূলে। সেখানে খেলতে নেমে পাকিস্তান হেসেখেলে ব্যাট করলেও খেই হারালো বাংলাদেশ। এক ম্যাচ হাতে রেখে পাকিস্তানকে সিরিজ হারানোর পর তারা আজ বিধ্বস্ত। আগে ব্যাটিং করে বাংলাদেশকে ১৭৯ রানের লক্ষ্য দেয় পাকিস্তান। জবাবে খেলতে নেমে পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণের সামনে অসহায় স্বাগতিকরা, অলআউট ১০৪ রানে। তাতে ৭৪ রানে হেরে সিরিজ শেষ করেছে। বাজেভাবে হারলেও তাতে চাপা পড়েনি পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের আনন্দ।
মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে আজ আরেকটি ইতিহাস তৈরির সুযোগ ছিল বাংলাদেশের। আজ জিতলে পারলে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে পাকিস্তানকে ধবলধোলাই করা তৃতীয় দল হতো বাংলাদেশ। এর আগে এই কীর্তি গড়েছিল শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়া। ২০১৯ সালে পাকিস্তানকে তাদের ঘরের মাঠে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছিল শ্রীলঙ্কা। আর গত বছর পাকিস্তান ধবলধোলাই হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার মাঠে। এবার সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ব্যাটারদের ব্যর্থতায় সুযোগটি হেলায় হারাতে হলো।
আগের দুই ম্যাচে কিছুটা ধীরগতির উইকেট ছিল। উইকেটে অসমান বাউন্সও ছিল খানিকটা। তবে আজকের ম্যাচ পুরো স্পোর্টিং উইকেট। ব্যাটারদের পাশাপাশি বোলারদেরও ছিল দারুণ কিছু করার সুযোগ। কিন্তু সিরিজের শেষ ম্যাচটিতে শুরুতে বোলাররা যেমন ব্যর্থ হয়েছেন, তেমনই ব্যাটাররাও ব্যর্থ। বাংলাদেশের বোলারদের নখদন্তহীন বোলিংয়ের সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান ১৭৮ রান তুলে ফেলে।
দারুণ ব্যাটিং উইকেটে বাংলাদেশের জন্য লক্ষ্যটা খুব কঠিন কিছু ছিল না। কিন্তু প্রথম পাওয়ার প্লেতেই বাংলাদেশ ম্যাচ থেকে ছিটকে যায়। ৬ ওভারের মধ্যেই বাংলাদেশ হারিয়ে ফেলে ২৫ রানে ৫ উইকেট। তানজিদ হাসান তামিম, লিটন দাস, জাকের আলী অনিক, মেহেদী হাসান মিরাজ, শেখ মেহেদীদের স্কোর যেন মোবাইল নাম্বার! পাওয়ার প্লের পর পরের দশ বলের মধ্যে আরও দুটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ওপেনার নাঈম লড়াইয়ের চেষ্টা করেও আউট হয়েছেন ১০ রানে। ৪১ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর নাসুম আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন মিলে ২৪ রানের জুটি গড়েন। নাসুম ১৩ বলে ৯ রান করে আউট হলে জুটি ভাঙে তাদের। এরপর সাইফউদ্দিনের ব্যাটে হারের ব্যবধান কিছুটা কমে। এই অলরাউন্ডারের ব্যাটিং ঝড় আরও চলতে পারতো। কিন্তু শরিফুলের লম্বা শটটি দারুণভাবে তালুবন্দি করেন আব্বাস আফ্রিদি। আর তাতেই বাংলাদেশ অলআউট হয় ১০৪ রানে। ৩৪ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন সাইফউদ্দিন।
পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে সালমান মির্জা ও ফাহিম আশরাফ তোপ দাগান। সালমান ১৯ রান খরচায় নেন তিনটি উইকেট। ফাহিম ও মোহাম্মদ নওয়াজ নেন দুটি করে উইকেট। এছাড়া আহমেদ দানিয়াল, সালমান আগা ও হুসেইন তালাত নেন একটি করে উইকেট।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পায় পাকিস্তান। ভালো ব্যাটিং উইকেট পেয়ে জ্বলে উঠলেন পাকিস্তানের ব্যাটাররা। আগেই দুই ম্যাচে ব্যর্থ হওয়ার পর উইকেটের দায় দিয়েছিলেন তারা। আজকে ছন্দময় ব্যাটিং করেছেন টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডার সবাই। পাওয়ার প্লেতে লিটন একের পর এক বোলার বদলে রানের গতি কমানোর চেষ্টা করলেও সফল হননি। ৬ ওভারে বিনা উইকেটে পাকিস্তান তোলে ৫৭ রান।
শুরুতেই ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন
৭.৫ ওভারে ৮২ রানে গড়া উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন নাসুম। তার বলে সাইম আইয়ুবের দুর্দান্ত ক্যাচ নেন শামীম হোসেন। শাহিবজাদা ফারহান ২৯ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে ৪১ বলে খেলেন ৬৩ রানের ইনিংস। তাকেও থামান নাসুম। এরপর জীবন পাওয়া হারিসকে মাত্র ৫ রানে বিদায় করেন তাসকিন।
পাকিস্তানের চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটে শরিফুল ইসলামের দারুণ এক ওভারে। ১৭ বলে ৩৩ রান করা হাসান নওয়াজ ফেরেন শেখ মেহেদীর দুর্দান্ত ক্যাচে। বাংলাদেশি স্পিনারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে এক সময় দারুণ ছন্দে থাকা পাকিস্তান পড়েছে চাপেই। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। মোহাম্মদ নওয়াজের ১৬ বলে ২৭ রানের ক্যামিওতে পাকিস্তান ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৮ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে ফেলে।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে তাসকিন ৩৮ রানে তিনটি উইকেট শিকার করেছেন। নাসুম নেন দুটি উইকেট। একটি করে উইকেট শিকার করেন শরিফুল ও সাইফউদ্দিন।