১০:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইরানে আবারও হামলার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল?

  • Reporter Name
  • Update Time : ১১:৪১:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
  • ১৩ Time View

ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধকে সাফল্য হিসেবে দেখছে ইসরায়েল। দেশটির নেতারা বলছেন, ইরানের কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা, প্রতিরক্ষা সক্ষমতা দুর্বল করা এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ফরদোর পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য রাজি করানো, সবই ছিল সেই যুদ্ধের অর্জন। তবে কেবল এটুকুতেই থেমে নেই ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, আমি গ্যাসের প্যাডেল থেকে পা সরানোর কোনও ইচ্ছা রাখি না।’ অর্থাৎ তিনি আবারও হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া একাধিক বিশ্লেষকের মত অনুসারে, ইসরায়েল বর্তমানে সেই সুযোগ খুঁজছে, যার মাধ্যমে ইরানকে আরও দুর্বল করা যাবে কিংবা শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে। তবে এ ধরনের অভিযান চালাতে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি নিতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কাছ থেকে তা সহজে মিলবে না বলেই মনে করছেন অনেকে।

গত জুনের মাঝামাঝি সময়ে ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় যুদ্ধ। এতে এক হাজারের বেশি ইরানি এবং ২৯ জন ইসরায়েলি নিহত হন। ইসরায়েল দাবি করেছিল, এটি ছিল আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ। যার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা। যদিও তেহরান দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, তাদের কর্মসূচি কেবল বেসামরিক উদ্দেশ্যে।

আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছিলেন, আমরা ইসরায়েলের যেকোনও নতুন সামরিক অভিযানের জন্য প্রস্তুত। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আবারও ইসরায়েলের ভেতরে গভীরভাবে আঘাত হানতে প্রস্তুত রয়েছে।

ইরান বিষয়ক বিশ্লেষক ত্রিতা পারসি মনে করেন, নেতানিয়াহুর লক্ষ্য ইরানকে সিরিয়া বা লেবাননের মতো করে ফেলা। যেখানে ইসরায়েল প্রয়োজনে যেকোনও সময় হামলা চালাতে পারবে এবং কেউ তেমন প্রতিক্রিয়া জানাবে না।

তিনি বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধ পুনরায় শুরু করতে চায়। কারণ তারা চায় ইরানকে এমন এক অবস্থা এনে দিতে, যাতে তা বারবার আঘাত করার জন্য উন্মুক্ত থাকে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপীয় দেশগুলো যদি আবার ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তবে সেটি ইসরায়েলের জন্য একটি নতুন যুদ্ধের অজুহাত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইতোমধ্যে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আলোচনায় উঠে এসেছে, আগস্টের মধ্যে নতুন চুক্তি না হলে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হবে।

২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে যেসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল, তা ফেরার আশঙ্কায় ইরান চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষক পারসি। তখন ইসরায়েল রাজনৈতিকভাবে আবার হামলা চালানোর ‘সুযোগ’ পেতে পারে।

মার্কিন নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল হয়তো ইতোমধ্যে ইরানের অভ্যন্তরে নাশকতা অভিযান শুরু করেছে। রহস্যজনকভাবে কিছু আবাসিক ভবন, তেল শোধনাগার, বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা ও জুতার কারখানায় আগুন ও বিস্ফোরণের পেছনে ইসরায়েলি গোয়েন্দা তৎপরতা থাকতে পারে বলে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।

বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, ইসরায়েল ইরানের ভেতরে যে গোয়েন্দা কাঠামো গড়ে তুলেছে, সেটি মাঝে-মধ্যে সক্রিয় রাখতে হয়। কখনও কৌশলগত কারণে নয়, বরং শুধু জানান দেওয়ার জন্যই আগুন বা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটানো হয়।’

গাজায় চালানো নির্মম অভিযানের মধ্যেও নেতানিয়াহু সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন এবং ইরানের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছেন। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটের মুখে নতুন করে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হলে ইসরায়েলের জনগণকে একত্রিত করা সম্ভব হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

তবে এতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী হবে তা পরিষ্কার নয়। ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, ইরান নিয়ে ইসরায়েলে ঐকমত্য রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে ট্রাম্প কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন, সেটা নেতানিয়াহুর জন্য বড় বিবেচ্য বিষয়।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআইপির ইরান বিশেষজ্ঞ নেগার মরতাজাভি বলেন, ইরান জানে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি হলে ইসরায়েলি হামলার সম্ভাবনা কমে যাবে। তারা এখনও কূটনৈতিক সমাধান চায়, তবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতও রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

News Editor

জনপ্রিয় খবর

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের শুভেচ্ছা

ইরানে আবারও হামলার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল?

Update Time : ১১:৪১:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধকে সাফল্য হিসেবে দেখছে ইসরায়েল। দেশটির নেতারা বলছেন, ইরানের কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা, প্রতিরক্ষা সক্ষমতা দুর্বল করা এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ফরদোর পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার জন্য রাজি করানো, সবই ছিল সেই যুদ্ধের অর্জন। তবে কেবল এটুকুতেই থেমে নেই ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, আমি গ্যাসের প্যাডেল থেকে পা সরানোর কোনও ইচ্ছা রাখি না।’ অর্থাৎ তিনি আবারও হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া একাধিক বিশ্লেষকের মত অনুসারে, ইসরায়েল বর্তমানে সেই সুযোগ খুঁজছে, যার মাধ্যমে ইরানকে আরও দুর্বল করা যাবে কিংবা শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে। তবে এ ধরনের অভিযান চালাতে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্রের অনুমতি নিতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের কাছ থেকে তা সহজে মিলবে না বলেই মনে করছেন অনেকে।

গত জুনের মাঝামাঝি সময়ে ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার মধ্য দিয়ে শুরু হয় যুদ্ধ। এতে এক হাজারের বেশি ইরানি এবং ২৯ জন ইসরায়েলি নিহত হন। ইসরায়েল দাবি করেছিল, এটি ছিল আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ। যার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংস করা। যদিও তেহরান দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, তাদের কর্মসূচি কেবল বেসামরিক উদ্দেশ্যে।

আল-জাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছিলেন, আমরা ইসরায়েলের যেকোনও নতুন সামরিক অভিযানের জন্য প্রস্তুত। আমাদের সশস্ত্র বাহিনী আবারও ইসরায়েলের ভেতরে গভীরভাবে আঘাত হানতে প্রস্তুত রয়েছে।

ইরান বিষয়ক বিশ্লেষক ত্রিতা পারসি মনে করেন, নেতানিয়াহুর লক্ষ্য ইরানকে সিরিয়া বা লেবাননের মতো করে ফেলা। যেখানে ইসরায়েল প্রয়োজনে যেকোনও সময় হামলা চালাতে পারবে এবং কেউ তেমন প্রতিক্রিয়া জানাবে না।

তিনি বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধ পুনরায় শুরু করতে চায়। কারণ তারা চায় ইরানকে এমন এক অবস্থা এনে দিতে, যাতে তা বারবার আঘাত করার জন্য উন্মুক্ত থাকে।

বিশ্লেষকদের মতে, ইউরোপীয় দেশগুলো যদি আবার ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তবে সেটি ইসরায়েলের জন্য একটি নতুন যুদ্ধের অজুহাত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ইতোমধ্যে জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। আলোচনায় উঠে এসেছে, আগস্টের মধ্যে নতুন চুক্তি না হলে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করা হবে।

২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির মাধ্যমে যেসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছিল, তা ফেরার আশঙ্কায় ইরান চুক্তি থেকে সরে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষক পারসি। তখন ইসরায়েল রাজনৈতিকভাবে আবার হামলা চালানোর ‘সুযোগ’ পেতে পারে।

মার্কিন নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েল হয়তো ইতোমধ্যে ইরানের অভ্যন্তরে নাশকতা অভিযান শুরু করেছে। রহস্যজনকভাবে কিছু আবাসিক ভবন, তেল শোধনাগার, বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকা ও জুতার কারখানায় আগুন ও বিস্ফোরণের পেছনে ইসরায়েলি গোয়েন্দা তৎপরতা থাকতে পারে বলে কর্মকর্তারা ধারণা করছেন।

বিশ্লেষক ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, ইসরায়েল ইরানের ভেতরে যে গোয়েন্দা কাঠামো গড়ে তুলেছে, সেটি মাঝে-মধ্যে সক্রিয় রাখতে হয়। কখনও কৌশলগত কারণে নয়, বরং শুধু জানান দেওয়ার জন্যই আগুন বা বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটানো হয়।’

গাজায় চালানো নির্মম অভিযানের মধ্যেও নেতানিয়াহু সিরিয়া, লেবানন, ইয়েমেন এবং ইরানের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছেন। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটের মুখে নতুন করে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হলে ইসরায়েলের জনগণকে একত্রিত করা সম্ভব হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

তবে এতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী হবে তা পরিষ্কার নয়। ওরি গোল্ডবার্গ বলেন, ইরান নিয়ে ইসরায়েলে ঐকমত্য রয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র, বিশেষ করে ট্রাম্প কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবেন, সেটা নেতানিয়াহুর জন্য বড় বিবেচ্য বিষয়।

ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআইপির ইরান বিশেষজ্ঞ নেগার মরতাজাভি বলেন, ইরান জানে একটি নতুন পারমাণবিক চুক্তি হলে ইসরায়েলি হামলার সম্ভাবনা কমে যাবে। তারা এখনও কূটনৈতিক সমাধান চায়, তবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতও রয়েছে।