০৭:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভুল তথ্য না ছড়ানোর আহ্বান মাইলস্টোনের শিক্ষিকার 

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৮:৩১:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
  • ১৬ Time View

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে ভুল তথ্য না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষিকা পূর্ণিমা দাস।

বুধবার (২৩ জুলাই) সকালে ফেসবুকে দেওয়া এক আবেগঘন পোস্টে পূর্ণিমা দাস এ অনুরোধ করেন।মাইলস্টোনের হায়দার আলী ভবনের এই শিক্ষিকা বিমান বিধ্বস্তের সময় নিজেও আগুনে আটকা পড়েছিলেন।

মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষিকা পূর্ণিমা দাস লিখেছেন, ‘ভুল তথ্য ছড়াবেন না। ’ মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলবেন না।  

লাশ নিয়ে ফেসবুকে বিভ্রান্তকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন সেই শিক্ষিকা।  


নিচে পূর্ণিমা দাসের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

“#sky_Cloud_section_milestone (স্কাই ক্লাউড সেকশন মাইলস্টোন)
আমি মাইলস্টোনের হায়দার আলী ভবনের একজন শিক্ষিকা। আপনাদের দুইহাত জোড় করে বলছি ভুল তথ্য ছড়াবেন না। আমিও আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছিলাম আমার চেয়ে আপনারা ফেসবুকবাসী বেশি জানবেন না তাই না?

স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১টায়, আমি ঠিক তার এক থেকে দুই মিনিটে স্কাই সেকশনে ঢুকে দেখি ওখানে শুধু একটা বাচ্চা দাঁড়ানো। কেউ ছিল না, সবাই চলে গিয়েছিল। আপনারা জানেন না ছুটির সময় হলে বাচ্চারা তিন চার মিনিট আগে থেকেই কীভাবে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাসায় যাওয়ার জন্য এবং আমি চলে আসার পর অভিভাবক আসেনি বলে আবার স্কাই এ কিছু বাচ্চা ঢুকেছিল তাদেরকেও আমাদের আরেকজন টিচার ক্লাস থেকে নিয়ে অন্য সেকশনে বসায়।

এরপরেও আবার কয়েকজন (৫ -৬ জন) ঢুকেছিল তাদেরকেই আমরা হারিয়ে ফেলেছি- যারা করিডোরে, দোলনায় খেলছিল বা সিঁড়িঘরে ছোটাছুটি করছিল বা ওই মুহূর্তে ওই জায়গায় কাকতালীয় ভাবে ছিল। (এদের সংখ্যা অনিশ্চিত)।

এরপর আসেন #cloud (ক্লাউড) এ ওখানে বাচ্চার সংখ্যা (৮-১০) স্কাই-এর চেয়ে বেশি ছিল। আমার ধারণা মাহরিন মিস, মাসুকা মিস ও মাহ্ফুজা মিস ওখান থেকেই বাচ্চা বের করার চেষ্টা করছিলেন এবং তাদের বের করতে করতে নিজেরা ঝলসে যান। যার মধ্যে মাহরিন মিস এবং মাসুকা মিসকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। মাহফুজা মিসের অবস্থা এখন গুরুতর তিনি লাইফ সাপোর্টে আছেন। ওনার জন্য আপনারা দোয়া করবেন।

Cloud (ক্লাউড) এর পাশের রুম #mayna (ময়না) এখানে কিছু বাচ্চা ইনজিউরড্, কেউ মারা যায়নি। mayna (ময়না) এর পাশে #doyel (দোয়েল) এই ক্লাসের একটা বাচ্চা আর নেই। doyel (দোয়েল) এর পাশে #tuberose (রজনিগন্ধা) এবং #waterlily (শাপলা) এখানেও সবাই সেফ আছে।

দ্বিতীয় তলার বাচ্চারদেরও ঘটনা একই। দুটি ক্লাসরুম একটা টিচার্স রুম পুড়েছে। ওখানেও ১৫-২০ জন ছিলেন। হায়দার আলী ভবনের মুখে, দোলনায় এবং করিডরের হাঁটাহাঁটি করা বাচ্চার সংখ্যা এভাবে বলতে পারবো না। অনুমান করাও কঠিন। তার মধ্যে অনেকের শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, যে লাশগুলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এরমধ্যে আছে ওখানকার আয়া রাও। এখান থেকেই বেশিরভাগ আহত। আহতের সংখ্যাও ঠিকভাবে বলা যায় না।

তাই ভুল তথ্য ছড়াবেন না। আপনারা যত মৃতের সংখ্যা বলছেন সেটা একেবারে সম্ভব না। তার মধ্যে আমরা যারা দুই কর্নারে ছিলাম তারা তো অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছি।

আর লাশ গুম করার কথা যারা বললেন, আপনাদের কতখানি মাথায় সমস্যা আমার জানা নেই। কারণ একটা বাচ্চা যাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি তার লাশটাতো অন্তত আমরা তার বাবা মায়ের কাছে পৌঁছানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। তাই না? আমরা টিচার, রাজনীতিবিদ নই।

আপনাদের কোনো ধারণা নেই, এই শিক্ষক শিক্ষিকারা কীভাবে বাচ্চাদেরকে সারাদিন আগলে রাখেন। ছুটি হওয়ার সময় মাহরিন মিস গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিদিন বাচ্চাদেরকে অভিভাবকদের হাতে বুঝিয়ে দেন। যতক্ষণ একটা বাচ্চারও অভিভাবক থাকে উনি গেট থেকে নড়েন না।

তাই হাত জোড় করে বলছি। ভুল তথ্য ছড়াবেন না। মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলবেন না। নিহতের সংখ্যা সামনে বাড়বে আপনাদের বাড়াতে হবে না। আসেন আমরা প্রার্থনা করি প্রতিটা ফুলের জন্য যারা অকালে ঝরে গেল। আমাদের শিক্ষক শিক্ষিকা স্টাফ আর ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর জন্য আসেন আজ প্রার্থনা করি।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় পোস্টটি শেয়ার করেছেন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও।  

এমইউএম/এসআইএস

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

News Editor

জনপ্রিয় খবর

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের শুভেচ্ছা

ভুল তথ্য না ছড়ানোর আহ্বান মাইলস্টোনের শিক্ষিকার 

Update Time : ০৮:৩১:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমানবাহিনীর এফটি-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা নিয়ে ভুল তথ্য না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন স্কুলটির শিক্ষিকা পূর্ণিমা দাস।

বুধবার (২৩ জুলাই) সকালে ফেসবুকে দেওয়া এক আবেগঘন পোস্টে পূর্ণিমা দাস এ অনুরোধ করেন।মাইলস্টোনের হায়দার আলী ভবনের এই শিক্ষিকা বিমান বিধ্বস্তের সময় নিজেও আগুনে আটকা পড়েছিলেন।

মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষিকা পূর্ণিমা দাস লিখেছেন, ‘ভুল তথ্য ছড়াবেন না। ’ মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলবেন না।  

লাশ নিয়ে ফেসবুকে বিভ্রান্তকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন সেই শিক্ষিকা।  


নিচে পূর্ণিমা দাসের ফেসবুক পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

“#sky_Cloud_section_milestone (স্কাই ক্লাউড সেকশন মাইলস্টোন)
আমি মাইলস্টোনের হায়দার আলী ভবনের একজন শিক্ষিকা। আপনাদের দুইহাত জোড় করে বলছি ভুল তথ্য ছড়াবেন না। আমিও আগুনের মধ্যে আটকা পড়েছিলাম আমার চেয়ে আপনারা ফেসবুকবাসী বেশি জানবেন না তাই না?

স্কুল ছুটি হয় দুপুর ১টায়, আমি ঠিক তার এক থেকে দুই মিনিটে স্কাই সেকশনে ঢুকে দেখি ওখানে শুধু একটা বাচ্চা দাঁড়ানো। কেউ ছিল না, সবাই চলে গিয়েছিল। আপনারা জানেন না ছুটির সময় হলে বাচ্চারা তিন চার মিনিট আগে থেকেই কীভাবে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে বাসায় যাওয়ার জন্য এবং আমি চলে আসার পর অভিভাবক আসেনি বলে আবার স্কাই এ কিছু বাচ্চা ঢুকেছিল তাদেরকেও আমাদের আরেকজন টিচার ক্লাস থেকে নিয়ে অন্য সেকশনে বসায়।

এরপরেও আবার কয়েকজন (৫ -৬ জন) ঢুকেছিল তাদেরকেই আমরা হারিয়ে ফেলেছি- যারা করিডোরে, দোলনায় খেলছিল বা সিঁড়িঘরে ছোটাছুটি করছিল বা ওই মুহূর্তে ওই জায়গায় কাকতালীয় ভাবে ছিল। (এদের সংখ্যা অনিশ্চিত)।

এরপর আসেন #cloud (ক্লাউড) এ ওখানে বাচ্চার সংখ্যা (৮-১০) স্কাই-এর চেয়ে বেশি ছিল। আমার ধারণা মাহরিন মিস, মাসুকা মিস ও মাহ্ফুজা মিস ওখান থেকেই বাচ্চা বের করার চেষ্টা করছিলেন এবং তাদের বের করতে করতে নিজেরা ঝলসে যান। যার মধ্যে মাহরিন মিস এবং মাসুকা মিসকে আমরা হারিয়ে ফেলেছি। মাহফুজা মিসের অবস্থা এখন গুরুতর তিনি লাইফ সাপোর্টে আছেন। ওনার জন্য আপনারা দোয়া করবেন।

Cloud (ক্লাউড) এর পাশের রুম #mayna (ময়না) এখানে কিছু বাচ্চা ইনজিউরড্, কেউ মারা যায়নি। mayna (ময়না) এর পাশে #doyel (দোয়েল) এই ক্লাসের একটা বাচ্চা আর নেই। doyel (দোয়েল) এর পাশে #tuberose (রজনিগন্ধা) এবং #waterlily (শাপলা) এখানেও সবাই সেফ আছে।

দ্বিতীয় তলার বাচ্চারদেরও ঘটনা একই। দুটি ক্লাসরুম একটা টিচার্স রুম পুড়েছে। ওখানেও ১৫-২০ জন ছিলেন। হায়দার আলী ভবনের মুখে, দোলনায় এবং করিডরের হাঁটাহাঁটি করা বাচ্চার সংখ্যা এভাবে বলতে পারবো না। অনুমান করাও কঠিন। তার মধ্যে অনেকের শরীর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, যে লাশগুলো খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

এরমধ্যে আছে ওখানকার আয়া রাও। এখান থেকেই বেশিরভাগ আহত। আহতের সংখ্যাও ঠিকভাবে বলা যায় না।

তাই ভুল তথ্য ছড়াবেন না। আপনারা যত মৃতের সংখ্যা বলছেন সেটা একেবারে সম্ভব না। তার মধ্যে আমরা যারা দুই কর্নারে ছিলাম তারা তো অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছি।

আর লাশ গুম করার কথা যারা বললেন, আপনাদের কতখানি মাথায় সমস্যা আমার জানা নেই। কারণ একটা বাচ্চা যাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি তার লাশটাতো অন্তত আমরা তার বাবা মায়ের কাছে পৌঁছানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। তাই না? আমরা টিচার, রাজনীতিবিদ নই।

আপনাদের কোনো ধারণা নেই, এই শিক্ষক শিক্ষিকারা কীভাবে বাচ্চাদেরকে সারাদিন আগলে রাখেন। ছুটি হওয়ার সময় মাহরিন মিস গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিদিন বাচ্চাদেরকে অভিভাবকদের হাতে বুঝিয়ে দেন। যতক্ষণ একটা বাচ্চারও অভিভাবক থাকে উনি গেট থেকে নড়েন না।

তাই হাত জোড় করে বলছি। ভুল তথ্য ছড়াবেন না। মানুষের ইমোশন নিয়ে খেলবেন না। নিহতের সংখ্যা সামনে বাড়বে আপনাদের বাড়াতে হবে না। আসেন আমরা প্রার্থনা করি প্রতিটা ফুলের জন্য যারা অকালে ঝরে গেল। আমাদের শিক্ষক শিক্ষিকা স্টাফ আর ছোট ছোট বাচ্চাগুলোর জন্য আসেন আজ প্রার্থনা করি।

সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় পোস্টটি শেয়ার করেছেন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও।  

এমইউএম/এসআইএস