০১:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাবনায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১২

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৭:২৭:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫
  • ১৭ Time View

পাবনা শহরের মণ্ডলপাড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মণ্ডলপাড়া জামে মসজিদের পাশের বউবাজার ক্লাব এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই মণ্ডলপাড়ায় দুটি গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উত্তেজনা চলছিল। এর আগেও কয়েক দফা কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাতে সেই উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। প্রতিপক্ষের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে একদল বউবাজার ক্লাবে অতর্কিতে উপস্থিত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এই হামলার নেতৃত্বে ছিল পাবনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুহিন ওরফে ল্যাংড়া তুহিন। তার নেতৃত্বে অন্তত ২০-২৫ জনের সংঘবদ্ধ দল ক্লাব এলাকায় গিয়ে অতর্কিতে লাঠি, ছোরা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে তুহিন গ্রুপ একটি একনলা বন্দুক দিয়ে গুলি চালায়। গুলিতে প্রতিপক্ষ গ্রুপের বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত হন। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

গুলিবিদ্ধ ও আহত অবস্থায় এলাকাবাসীর সহায়তায় অন্তত ১২ জনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছেন মো. ইমরান, শহিদুল ইসলাম মিলন, সোহান, মাহফুজ, তাহাত, বিজয়, জাফর, রিয়েল, জুয়েল, হাসিফ, নওশাদ ও প্রান্ত। তাদের সকলের বাড়ি পাবনা শহরের মণ্ডলপাড়া ও কাচারিপাড়া এলাকায়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পাবনা থানা, ডিবি ও ডিএসবি পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। ঘটনাস্থল থেকে ধারালো ছোরা ও ছয়টি গুলির খালি খোসা উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে আটক করা হয়। তার নাম নাজিম, বয়স আনুমানিক ২৬ বছর। তিনি মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা। আটক নাজিমের দেহ তল্লাশি করে পুলিশ তার কাছ থেকে একটি বড় ছোরা এবং দুটি বন্দুকের খালি খোসা উদ্ধার করে।

পাবনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা পুলিশের একাধিক ইউনিট পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। একজনকে আটক করা হয়েছে। সংঘর্ষে জড়িত অন্যান্যদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বর্তমানে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’ তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থার প্রস্তুতি চলছে। হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে মণ্ডলপাড়া ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে সংঘর্ষের পর এলাকাজুড়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এর আগেও ছোটখাটো কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এমন ভয়াবহ সংঘর্ষের সূত্রপাত হলো বলে অনেকের অভিযোগ। পাবনা শহরের কেন্দ্রস্থলে এ ধরনের সহিংস সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। তারা বলছেন, আধিপত্যের নামে এলাকায় যে সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়ছে, তা এখনই কঠোরভাবে দমন না করলে ভবিষ্যতে বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

News Editor

জনপ্রিয় খবর

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের শুভেচ্ছা

পাবনায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ১২

Update Time : ০৭:২৭:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই ২০২৫

পাবনা শহরের মণ্ডলপাড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (২৩ জুলাই) রাত আনুমানিক ১১টার দিকে শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মণ্ডলপাড়া জামে মসজিদের পাশের বউবাজার ক্লাব এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বেশ কিছুদিন ধরেই মণ্ডলপাড়ায় দুটি গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উত্তেজনা চলছিল। এর আগেও কয়েক দফা কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাতে সেই উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। প্রতিপক্ষের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে একদল বউবাজার ক্লাবে অতর্কিতে উপস্থিত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এই হামলার নেতৃত্বে ছিল পাবনা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তুহিন ওরফে ল্যাংড়া তুহিন। তার নেতৃত্বে অন্তত ২০-২৫ জনের সংঘবদ্ধ দল ক্লাব এলাকায় গিয়ে অতর্কিতে লাঠি, ছোরা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে তুহিন গ্রুপ একটি একনলা বন্দুক দিয়ে গুলি চালায়। গুলিতে প্রতিপক্ষ গ্রুপের বেশ কয়েকজন রক্তাক্ত হন। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

গুলিবিদ্ধ ও আহত অবস্থায় এলাকাবাসীর সহায়তায় অন্তত ১২ জনকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছেন মো. ইমরান, শহিদুল ইসলাম মিলন, সোহান, মাহফুজ, তাহাত, বিজয়, জাফর, রিয়েল, জুয়েল, হাসিফ, নওশাদ ও প্রান্ত। তাদের সকলের বাড়ি পাবনা শহরের মণ্ডলপাড়া ও কাচারিপাড়া এলাকায়। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে পাবনা থানা, ডিবি ও ডিএসবি পুলিশের একাধিক টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা পুরো এলাকা ঘিরে ফেলে। ঘটনাস্থল থেকে ধারালো ছোরা ও ছয়টি গুলির খালি খোসা উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে আটক করা হয়। তার নাম নাজিম, বয়স আনুমানিক ২৬ বছর। তিনি মণ্ডলপাড়ার বাসিন্দা। আটক নাজিমের দেহ তল্লাশি করে পুলিশ তার কাছ থেকে একটি বড় ছোরা এবং দুটি বন্দুকের খালি খোসা উদ্ধার করে।

পাবনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা পুলিশের একাধিক ইউনিট পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। একজনকে আটক করা হয়েছে। সংঘর্ষে জড়িত অন্যান্যদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। বর্তমানে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’ তিনি আরও জানান, এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থার প্রস্তুতি চলছে। হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বর্তমানে মণ্ডলপাড়া ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে সংঘর্ষের পর এলাকাজুড়ে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা বলছেন, দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিনের। এর আগেও ছোটখাটো কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় এমন ভয়াবহ সংঘর্ষের সূত্রপাত হলো বলে অনেকের অভিযোগ। পাবনা শহরের কেন্দ্রস্থলে এ ধরনের সহিংস সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা। তারা বলছেন, আধিপত্যের নামে এলাকায় যে সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়ছে, তা এখনই কঠোরভাবে দমন না করলে ভবিষ্যতে বড় বিপদের আশঙ্কা রয়েছে।