মাত্র এক সিরিজ আগেই পাকিস্তানের বিপক্ষে হতাশাজনক পারফরম্যান্স করেছিলে লিটন দাসরা। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ধবলধোলাই হয়ে ফিরতে হয়েছিল দেশে। তবে এবার ঘরের মাঠে, পরিচিত কন্ডিশনে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ বাংলাদেশের সামনে। রবিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। প্রথম ম্যাচটি শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। সরাসরি দেখা যাবে টি-স্পোর্টস ও নাগরিক টেলিভিশনে।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এখন পর্যন্ত ২২বার মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। পরিসংখ্যান বলছে, এই ২২ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে মাত্র ৩টিতে, বাকি ১৯ ম্যাচে জয়ী দলের নাম পাকিস্তান। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হিসেবেও পাকিস্তানের বিপক্ষে সাফল্য নেই বললেই চলে। ছয়টি সিরিজের মধ্যে পাঁচটিই জিতেছে পাকিস্তান, বাংলাদেশ জয় পেয়েছে মাত্র একটি সিরিজে। তবে স্বস্তির জায়গা একটাই—ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ, সেটিও ২০১৫ সালে এক ম্যাচের সিরিজে। এরপর ঘরের মাঠেই আরও দুটি সিরিজে হারতে হয়েছে। সময়ের হিসেবে প্রায় ৯ বছর কুড়ি ওভারের ম্যাচ জেতে না বাংলাদেশ।
এবার পুরনো পরিসংখ্যানটা পাল্টাতে চায় বাংলাদেশ। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে আত্মবিশ্বাসী লিটন দাসের দল। ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লিটন বলেছেন, ‘আমাদের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে হবে। সব কিছু তৈরি হয় ইতিহাস হওয়ার জন্য। আর রেকর্ড কিন্তু ভাঙাও হয়। যদি ভালো ক্রিকেট খেলি, রেকর্ড ভাঙতে সময় লাগবে না। ওই রেকর্ডের চিন্তা না করে আমরা কী করতে পারি, আমাদের কতখানি সামর্থ্য আছে, কতটা ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি, সেসব ভাবলে ওই সব জিনিসই বদলে যাবে।’
চলতি বছর পাকিস্তানে গিয়ে ব্যর্থ হলেও লিটনের আশা ঘরের মাঠে ভালো ক্রিকেট খেলার মধ্য দিয়ে সাফল্য পাবে বাংলাদেশ, ‘পাকিস্তানে যখন অ্যাওয়ে খেলতে যাই, চিন্তাধারা ছিল আমরা জেতার জন্য খেলবো। কিন্তু জিততে পারিনি। দুর্ভাগ্যবশত কিছু ভুল হয়েছিল। আমার মনে হয় শ্রীলঙ্কা সিরিজে প্রথম ম্যাচ হারার পর ভালোভাবে কামব্যাক করতে পেরেছি। প্রত্যেক খেলোয়াড়ের কনফিডেন্স বেড়েছে। তবে দল আলাদা, পরিস্থিতি আলাদা। ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। মনোযোগ ধরে রাখতে হবে। মনোযোগ ধরে রাখাটা বিশেষ জরুরি।’
শ্রীলঙ্কা সিরিজ খেলে বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছে লিটন দাসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল। ফলে শুক্রবার ছিল ঐচ্ছিক অুশীলন। অনুশীলেন নাঈম শেখ ছাড়া কেউই ছিলেন না। তবে শনিবার পুরো দল ফ্লাডলাইটের আলোতে অনুশীলন করেছে। সন্ধ্যা ছয়টার পর মাঠে নেমে শুরুতেই ওয়ার্মআপ করেছেন। এরপর লম্বা সময় ফিল্ডিং অনুশীলন করে স্কিল অনুশীলনে মনোযোগ দিয়েছেন। অনুশীলনে প্রত্যেকে ক্রিকেটারই ছিলেন সিরিয়াস। লঙ্কানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দলটিকেই পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে রেখে দিয়েছেন নির্বাচকরা। এই মুহূর্তে বাংলাদেশ দলটি মানসিক ভাবে বেশ চাঙা। শ্রীলঙ্কাতে প্রথমবারের মতো তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে বেশ উৎফুল্ল পুরো দল। এই আত্মবশ্বাস নিয়েই আরও একটি সিরিজ খেলতে নামছে। তবে শঙ্কার জায়গায় অধারাবাহিকতা। বাংলাদেশ এক সিরিজ ভালো খেলে তো আরেক সিরিজে ব্যর্থ। টানা দুই সিরিজে সাফল্য পাওয়ার ইতিহাস খুব একটা নেই। পাশাপাশি ব্যাটারদের অধারাবাহিকতাও চিন্তার খোরাক যোগানোর জন্য যথেষ্ট। যদিও টি-টোয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশের ব্যাটরার রান পেয়েছেন। বিশেষ করে টপ অর্ডার ফর্মে ফেরাতে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তির হাওয়া। এখন এই ফর্মটা মিরপুরে ধরে রাখতে পারলেই ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
এদিকে, পাকিস্তান বেশ কিছু ক্রিকেটারদের বদল করে বাংলাদেশ সফরে এসেছে। অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান নেই। তবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) খেলেছেন এমন অন্তত ৯ জন ক্রিকেটার আছেন দলটিতে। স্বাভাবিক ভাবেই মিরপুরের কন্ডিশন তাদের নখদর্পণে থাকার কথা। যদিও লিটন এটিকে খুব বেশি সুবিধা হিসেবে দেখছেন না। এক প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, ‘যে কোনও দলকে হারানোর মতো মানসিকতা আমাদের আছে। আমরা সেই চেষ্টাই করবো। তবে আপনাকে নির্দিষ্ট দিনে ভালো ক্রিকেট খেলতে হবে। তার মানে এই না যে, হোম কন্ডিশন বলে আমরাই ভালো ক্রিকেট খেলবো। আগেও বলেছি, পাকিস্তান ভালো দল। তাদের বেশিরভাগ ক্রিকেটারই বিপিএল খেলে থাকে। তারাও সেই কন্ডিশনটা সম্পর্কে জানে। তবে এটা তেমন কোনও সমস্যা না। আমরা চেষ্টা করবো ভালো ক্রিকেটটা খেলতে।’
পাকিস্তানের অধিনায়ক সালমান আগা অবশ্য কন্ডিশন বুঝতে বিপিএলের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চান। ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমাদের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই বিপিএল খেলেছে। যেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাদের ইনপুট ও অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা তাদের ইনপুট দিয়েছে, আমরা ওই অনুযায়ীই পরিকল্পনা সাজিয়েছি।’
যদিও পাকিস্তানের অধিনায়ক মনে করিয়ে দিয়েছেন, ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলাটা ভীষণ রকম চ্যালেঞ্জিং, ‘এটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং একটা সফর। বাংলাদেশ যেকোনও মাঠে, যেকোনও দেশে সবসময়ই ভালো দল। আর যখন তারা ঘরের মাঠে খেলে, তখন আরও বেশি শক্তিশালী। আমরা জানি আমাদের কী ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে এবং আমরা সেসবের জন্য প্রস্তুত। ’
মিরপুরের উইকেট ঐতিহ্যগত ভাবেই কিছুটা স্পিনবান্ধব হয়ে থাকে। এখানে স্পিনারদের দাপট কিছুটা বেশি, ব্যাটারদের সংগ্রাম করতে হয়। সবমিলিয়ে কখনো কখনো উইকেটের আচরণ রহস্যময় হয়ে ওঠে। আজকের ম্যাচে কেমন উইকেট হবে, এটি প্রেডিকশন করা বেশ কঠিন। তবে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দুই অধিনায়ক আশা করছেন স্পোর্টিং উইকেটই হবে মিরপুরে। মিরপুর যেহেতু রহস্যময় উইকেট, সেক্ষেত্রে একাদশ নির্বাচন করাটা বেশ কঠিন। তবে ধারনা করা হচ্ছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলা শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের একাদশই মাঠে নামতে পারে। শেষ মুহূর্তে বদল এলে শরিফুল ইসলামের জায়গাতে দেখা যেতে পারে পেসার তাসকিন আহমেদকে।
উইকেট বা একাদশ যেমনই হোক, লিটন দাসদের লক্ষ্য একটাই—নিজেদের মাঠে পাকিস্তানকে হারিয়ে সিরিজ জয়। প্রতিপক্ষ কিংবা বাইরের আলোচনাতে নয়, নিজেদের পরিকল্পনা আর খেলায় পুরোপুরি মনোযোগ দিতে চান লিটন। শ্রীলঙ্কাকে সিরিজে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে ভরপুর বাংলাদেশ এবার পাকিস্তানের বিপক্ষেও স্মার্ট ক্রিকেট খেলে জয় পেতে চায়। সেটি করতে পারলে চলতি বছর কেবল পাকিস্তানের বিপক্ষেই ধবলধোলাইয়ের বদলা নেওয়া হবে না, একইসঙ্গে শেষ ৯ বছরে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ না জেতার আক্ষেপও ঘুচবে।