০৭:১২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ‘ভবিষ্যত বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি নিয়ে’ আলোচনা

  • Reporter Name
  • Update Time : ০২:০৫:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
  • ২৭ Time View

তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনার দ্বিতীয় দিনে দুই দেশের মধ্যে ‘বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে’ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে বর্তমান ও ভবিষ্যত বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি কেমন হবে, সে সব বিষয় উপস্থাপন ও যুক্তি-তর্ক হয়েছে বৈঠকে।

“বেশ কিছু বিষয়ে দুই দেশ মোটামুটিভাবে একমত হয়েছে। কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। আজ (শুক্রবার) ওয়াশিংটন সময় সকাল ৯টায় তৃতীয় দিনের আলোচনা শুরু হবে।”

ওয়াশিংটন ডিসিতে দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাম্বাসেডর জেমিসন গ্রিয়ারের একান্ত বৈঠক করেছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গ্রিয়ার ট্রাম্প প্রশাসনে মন্ত্রী পদমর্যাদার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তার সঙ্গে শুল্ক বিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্য ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।”

উপদেষ্টা বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পাশাপাশি আমদানির পরিমাণও বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। শুল্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যায্যতা প্রত্যাশা করে। পরিবেশ যেন বাংলাদেশের জন্য প্রতিযোগিতামূলক থাকে।

সব শুনে গ্রিয়ার সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে সরকারপ্রধানের দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন এ আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী ওয়াশিংটন ডিসিতে সরাসরি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

দেশি শিল্পকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার যুক্তি দেখিয়ে গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের ওপর চড়া হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা আসে।

বিশ্বজুড়ে নতুন এক বাণিজ্য যুদ্ধের সূত্রপাত করে মিত্র-শত্রু নির্বিচারে তার এ ব্যাপক শুল্কারোপ পরিচিতি পায় ট্রাম্প শুল্ক হিসেবে। সেই শুল্কারোপের ঘোষণা বিশ্ব অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে পরে নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সময় ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেন ডনাল্ড ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর থেকে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা উঠিয়ে দরকষাকষিতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় এই সময়ে।

তবে ৯ জুলাই আসার দুদিন আগেই বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানকে চিঠি দিয়ে নতুন হারে শুল্কারোপের কথা বলেন ট্রাম্প। শেষ সময়ে চুক্তি করতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েও কাজ হয়নি। সবার উদ্দেশ্যে একইভাষায় লেখা চিঠিতে বলা হয়, তার নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ অগাস্ট থেকে।

সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো চিঠিতে সব ধরনের বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ডনাল্ড ট্রাম্প।

নতুন শুল্ক হার ঘোষণা করলেও প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ডনাল্ড ট্রাম্প আলোচনার দুয়ার খোলা রাখার কথা বলেন।

যেসব দেশ আরও ছাড় দিতে রাজি, তাদের প্রতি সদয় হবেন জানিয়ে তিনি বলেছেন, “পরিস্থিতি বুঝে কিছুটা সমন্বয় করা যেতে পারে… আমরা অবিচার করব না।”

প্রথম দফার আলোচনায় সুবিধা করতে না পেরে এবার নড়েচড়ে বসেছে সরকার। নতুন করে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে।

এতদিন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ, এখন নতুন করে আরও ৩৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ায় এটি দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে।

এতে চাপে পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। একক দেশ হিসেবে পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

News Editor

জনপ্রিয় খবর

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের শুভেচ্ছা

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র ‘ভবিষ্যত বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি নিয়ে’ আলোচনা

Update Time : ০২:০৫:৫৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

তিন দিনব্যাপী বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনার দ্বিতীয় দিনে দুই দেশের মধ্যে ‘বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি নির্ধারণে’ গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হওয়ার কথা জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে বর্তমান ও ভবিষ্যত বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি কেমন হবে, সে সব বিষয় উপস্থাপন ও যুক্তি-তর্ক হয়েছে বৈঠকে।

“বেশ কিছু বিষয়ে দুই দেশ মোটামুটিভাবে একমত হয়েছে। কিছু বিষয় অমীমাংসিত রয়ে গেছে। আজ (শুক্রবার) ওয়াশিংটন সময় সকাল ৯টায় তৃতীয় দিনের আলোচনা শুরু হবে।”

ওয়াশিংটন ডিসিতে দ্বিতীয় দিনের আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন ইউএস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাম্বাসেডর জেমিসন গ্রিয়ারের একান্ত বৈঠক করেছেন।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গ্রিয়ার ট্রাম্প প্রশাসনে মন্ত্রী পদমর্যাদার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তার সঙ্গে শুল্ক বিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি দুই দেশের বাণিজ্য ও স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।”

উপদেষ্টা বৈঠকে বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির পাশাপাশি আমদানির পরিমাণও বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। শুল্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ন্যায্যতা প্রত্যাশা করে। পরিবেশ যেন বাংলাদেশের জন্য প্রতিযোগিতামূলক থাকে।

সব শুনে গ্রিয়ার সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে সরকারপ্রধানের দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন এ আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং অতিরিক্ত সচিব ড. নাজনীন কাওসার চৌধুরী ওয়াশিংটন ডিসিতে সরাসরি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

দেশি শিল্পকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার যুক্তি দেখিয়ে গত ২ এপ্রিল শতাধিক দেশের ওপর চড়া হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বাংলাদেশের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা আসে।

বিশ্বজুড়ে নতুন এক বাণিজ্য যুদ্ধের সূত্রপাত করে মিত্র-শত্রু নির্বিচারে তার এ ব্যাপক শুল্কারোপ পরিচিতি পায় ট্রাম্প শুল্ক হিসেবে। সেই শুল্কারোপের ঘোষণা বিশ্ব অর্থনীতিকে নাড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে পরে নিজের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সময় ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করেন ডনাল্ড ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের উপর থেকে শুল্ক ও অশুল্ক বাধা উঠিয়ে দরকষাকষিতে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয় এই সময়ে।

তবে ৯ জুলাই আসার দুদিন আগেই বাংলাদেশসহ ১৪ দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানকে চিঠি দিয়ে নতুন হারে শুল্কারোপের কথা বলেন ট্রাম্প। শেষ সময়ে চুক্তি করতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চালিয়েও কাজ হয়নি। সবার উদ্দেশ্যে একইভাষায় লেখা চিঠিতে বলা হয়, তার নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে ১ অগাস্ট থেকে।

সোমবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো চিঠিতে সব ধরনের বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ডনাল্ড ট্রাম্প।

নতুন শুল্ক হার ঘোষণা করলেও প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ডনাল্ড ট্রাম্প আলোচনার দুয়ার খোলা রাখার কথা বলেন।

যেসব দেশ আরও ছাড় দিতে রাজি, তাদের প্রতি সদয় হবেন জানিয়ে তিনি বলেছেন, “পরিস্থিতি বুঝে কিছুটা সমন্বয় করা যেতে পারে… আমরা অবিচার করব না।”

প্রথম দফার আলোচনায় সুবিধা করতে না পেরে এবার নড়েচড়ে বসেছে সরকার। নতুন করে আবার আলোচনা শুরু হয়েছে।

এতদিন বাংলাদেশের পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ, এখন নতুন করে আরও ৩৫ শতাংশ শুল্ক বাড়ায় এটি দাঁড়াবে ৫০ শতাংশে।

এতে চাপে পড়বে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। একক দেশ হিসেবে পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র।