০৮:৫৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

যমুনায় পানি বাড়ছে, দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ

  • Reporter Name
  • Update Time : ০১:৩৬:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫
  • ১৩ Time View

ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। দ্রুত নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলে দুর্ভোগে পড়েছে কৃষক, শ্রমিক ও হাট-বাজারে চলাচলকারী নিম্ন-আয়ের মানুষ।

শুক্রবার (১১ জুলাই) পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৭২ ও কাজিপুর পয়েন্টে ১৯৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর, কাজিপুর, চৌহালী, শাহজাদপুর ও বেলকুচি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের সবজি ক্ষেতে পানি উঠে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এর প্রভাবে শহর ও গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি হাটবাজারে কাঁচা সবজির দাম প্রতিদিন বাড়ছে। নদী ভাঙনের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নদী পাড়ের সাধারণ মানুষেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার পাঁচটি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রামে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনের তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের কয়েক হাজার মানুষ। নদী ভাঙনের উপজেলাগুলো হলো- সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর। ইতিমধ্যে এসব এলাকার বেশকিছু আবাদি জমি ও বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে নদী তীরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। দিনভর বৃষ্টির কারণে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। নিম্ন আয়ের মানুষ নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, গত এক সপ্তাহে সদর উপজেলার ভাটপিয়ারি ও বাহুকা, কাজীপুর উপজেলার চরাঞ্চলের নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, খাসরাজবাড়ি ইউনিয়ন, চৌহালী উপজেলার খাসকাউলিয়া ইউনিয়নের জনতার স্কুল এলাকা, উমারপুর ইউনিয়ন, স্থল ইউনিয়নের তেঘরি, কুড়াগাছা, লাঙ্গলমুড়া, ছোট চৌহালী ও ঘোড়জান ইউনিয়নের ফুলহারা ও চালুহারা গ্রামে, শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের গোপালপুর, সোনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর, শ্রীপুর, কুরসি, মাকড়া, ভাটদিঘুলিয়া ও কৈজুরী ইউনিয়নের চর ঠুটিয়া গ্রাম এবং বেলকুচি উপজেলার বড়ধূল ও সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।

ভাঙন এলাকার আখ, পাট, বাদাম, পটল, সবজি ক্ষেত ও কাউনসহ বহু ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের তাণ্ডবে কাজিপুর উপজেলার চরগিরিশ ইউনিয়নের ভেটুয়া গ্রামে অন্তত ১০০টি বসতবাড়ি ও শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর গ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়ি যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের ফুলজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরগিরিশ নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় ও ভেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের মুখে পড়েছে। চৌহালী উপজেলার স্থল ইউনিয়নের তেঘরি এলাকার মানুষ ভাঙন রোধে গত ৬ জুলাই নদী তীরে মানববন্ধন করেছেন।

সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বর্ণিচরের বাসিন্দা মান্নান বলেন, বৃষ্টির কারণে সবজি শহরে পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই বাজারে দাম অনেক বেড়ে গেছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, নদীতে পানি বাড়ার কারণে প্রবল স্রোত বইছে। এ কারণে নদী তীরের বেশ কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার ভাটপিয়ারী ও বাহুকা এলাকায় জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া নদী তীরে সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নদীতে পানি বাড়লেও এই মুহূর্তে ব্যাপকভাবে বন্যার আশঙ্কা নেই। আশা করছি, পানি বাড়ার হার ধীরে ধীরে কমবে, কারণ উজানের দিকে পানি নেমে যাচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

News Editor

জনপ্রিয় খবর

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের শুভেচ্ছা

যমুনায় পানি বাড়ছে, দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ

Update Time : ০১:৩৬:৫৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫

ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়েই চলছে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। দ্রুত নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলে দুর্ভোগে পড়েছে কৃষক, শ্রমিক ও হাট-বাজারে চলাচলকারী নিম্ন-আয়ের মানুষ।

শুক্রবার (১১ জুলাই) পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা হার্ড পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার ও কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ১৭২ ও কাজিপুর পয়েন্টে ১৯৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সদর, কাজিপুর, চৌহালী, শাহজাদপুর ও বেলকুচি উপজেলার নিম্নাঞ্চলের সবজি ক্ষেতে পানি উঠে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। এর প্রভাবে শহর ও গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি হাটবাজারে কাঁচা সবজির দাম প্রতিদিন বাড়ছে। নদী ভাঙনের শঙ্কাও দেখা দিয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নদী পাড়ের সাধারণ মানুষেরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার পাঁচটি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের প্রায় ২৫টি গ্রামে যমুনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনের তাণ্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের কয়েক হাজার মানুষ। নদী ভাঙনের উপজেলাগুলো হলো- সদর, কাজিপুর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর। ইতিমধ্যে এসব এলাকার বেশকিছু আবাদি জমি ও বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে নদী তীরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফসলি জমি ও বসতবাড়ি। দিনভর বৃষ্টির কারণে জনজীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে। নিম্ন আয়ের মানুষ নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, গত এক সপ্তাহে সদর উপজেলার ভাটপিয়ারি ও বাহুকা, কাজীপুর উপজেলার চরাঞ্চলের নিশ্চিন্তপুর, চরগিরিশ, খাসরাজবাড়ি ইউনিয়ন, চৌহালী উপজেলার খাসকাউলিয়া ইউনিয়নের জনতার স্কুল এলাকা, উমারপুর ইউনিয়ন, স্থল ইউনিয়নের তেঘরি, কুড়াগাছা, লাঙ্গলমুড়া, ছোট চৌহালী ও ঘোড়জান ইউনিয়নের ফুলহারা ও চালুহারা গ্রামে, শাহজাদপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের গোপালপুর, সোনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর, শ্রীপুর, কুরসি, মাকড়া, ভাটদিঘুলিয়া ও কৈজুরী ইউনিয়নের চর ঠুটিয়া গ্রাম এবং বেলকুচি উপজেলার বড়ধূল ও সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে।

ভাঙন এলাকার আখ, পাট, বাদাম, পটল, সবজি ক্ষেত ও কাউনসহ বহু ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ভাঙনের তাণ্ডবে কাজিপুর উপজেলার চরগিরিশ ইউনিয়নের ভেটুয়া গ্রামে অন্তত ১০০টি বসতবাড়ি ও শাহজাদপুর উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের ধীতপুর গ্রামের অন্তত ৫০টি বাড়ি যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া কাজিপুর উপজেলার নাটুয়ারপাড়া ইউনিয়নের ফুলজোড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরগিরিশ নিম্ন মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয় ও ভেটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের মুখে পড়েছে। চৌহালী উপজেলার স্থল ইউনিয়নের তেঘরি এলাকার মানুষ ভাঙন রোধে গত ৬ জুলাই নদী তীরে মানববন্ধন করেছেন।

সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বর্ণিচরের বাসিন্দা মান্নান বলেন, বৃষ্টির কারণে সবজি শহরে পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ছে। তাই বাজারে দাম অনেক বেড়ে গেছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান জানান, নদীতে পানি বাড়ার কারণে প্রবল স্রোত বইছে। এ কারণে নদী তীরের বেশ কিছু স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সদর উপজেলার ভাটপিয়ারী ও বাহুকা এলাকায় জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া নদী তীরে সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নদীতে পানি বাড়লেও এই মুহূর্তে ব্যাপকভাবে বন্যার আশঙ্কা নেই। আশা করছি, পানি বাড়ার হার ধীরে ধীরে কমবে, কারণ উজানের দিকে পানি নেমে যাচ্ছে।