১০:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পদ্মায় অবৈধ বালু উত্তোলন, রূপপুর প্রকল্প, হার্ডিং ও লালন শাহ সেতু চরম ঝুঁকিতে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৩:০৭:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
  • ২৮ Time View

অভিযোগ রয়েছে, পদ্মা নদীর সাড়াঘাট এলাকায় হাইকোর্টের একটি পুরনো আদেশকে ঢাল বানিয়ে ১৭ বছর ধরে অবৈধ বালু উত্তোলন করছে জাকারিয়া পিন্টু, সুলতান আলী টনি বিশ্বাস ও আবু সাঈদ খানের নেতৃত্বাধীন চক্র। তাদের তৎপরতায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে হার্ডিং ব্রিজ, লালন শাহ সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের ভিত্তি হুমকির মুখে। অন্যদিকে নাটোরের লালপুরে বৈধ বালু মহালের ইজারাদাররা প্রতিবন্ধকতার মুখে প্রতিবছর প্রায় ১০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,২০০৮ সালে পরিবেশ রক্ষার নামে পদ্মা নদীর ১২টি পয়েন্ট থেকে ১০ লাখ কিউবিক ফুট বালু উত্তোলনের অনুমতি পায় মেসার্স বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শাওন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আনোয়ারুল হক মাসুমসহ তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে অনুমতির পরিমাণ ছাড়িয়ে তারা ব্যাপকভাবে নদী খনন শুরু করে। অংশীদারদের মধ্যেকার বিরোধ ও আদালতের মামলা সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ করলেও, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব আলম হানিফের প্রভাবে পুনরায় কার্যক্রম শুরু হয়। ১৭ বছর আগের হাইড্রোগ্রাফি জরিপের আদেশকে চিরস্থায়ী লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহার করছে, যদিও পদ্মার গতিপথ ও গভীরতা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, অনুমতির চে‌য়ে বে‌শি বাাল‌গেট ব‌্যাবহার ক‌রে প্রতিদিন তারা শত শত বালগেট বালু তুলছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্মীরা যেন চোখ বন্ধ করে দায়িত্ব পালন করছেন। যেখানে নদী ছিল সেখানে এখন ফসলের মাঠ আর যেখানে বসতবাড়ি ছিল সেখানে গড়িয়েছে নদী। হার্ডিং ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প মাত্র ৩-৪ কিলোমিটার দূরে তাই প্রকল্পটি ভূমিধসের ঝুঁকিতেও রয়েছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তনে বাড়ছে বন্যা ও ভাঙনের আশঙ্কা।

গত সপ্তাহে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঈশ্বরদী প্রশাসন ক্ষণিকের জন্য অভিযান চালালেও ৩ জুলাই থেকে পুনরায় সক্রিয় হয়েছে চক্রটি। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে নিষ্ক্রিয়। চক্রটির বিএনপি-আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে সাংবাদিক ও স্থানীয়দের হুমকি-ধামকি দিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত রেখেছেন।

অন‍্যদিকে নাটোরের লালপুরের দিয়ার বাহাদুরপুর বালু মহাল সরকারি রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস। এইসব চক্রের কারণে ইজারাদাররা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। গত বছর রাসেল এন্টারপ্রাইজ ইজারা নিলেও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হয়ে মামলার শিকার হয়। চলতি বছরে মোল্লা এন্টারপ্রাইজ প্রায় ১০ কোটি টাকায় ইজারা নিলেও চক্রটি তাদের কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে। মাঝি-মাল্লাদের ওপর হামলা ও মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছে। স্পিডবোর্ডে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ব্যবসায়ীদের ভয় দেখাচ্ছে চক্রটি।
মোল্লা এন্টারপ্রাইজের মালিক বলেন, এভাবে চললে ভবিষ্যতে কেউ ইজারা নেবে না। প্রশাসনকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে! পাবনার জেলা প্রশাসক মফিজুল ইসলাম জানান, এইসব অবৈধ বালু মহালের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে অভিযান চলমান আছে। তবে নৌ পুলিশের তৎপরতা বেশি থাকা প্রয়োজন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

News Editor

জনপ্রিয় খবর

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের শুভেচ্ছা

পদ্মায় অবৈধ বালু উত্তোলন, রূপপুর প্রকল্প, হার্ডিং ও লালন শাহ সেতু চরম ঝুঁকিতে

Update Time : ০৩:০৭:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

অভিযোগ রয়েছে, পদ্মা নদীর সাড়াঘাট এলাকায় হাইকোর্টের একটি পুরনো আদেশকে ঢাল বানিয়ে ১৭ বছর ধরে অবৈধ বালু উত্তোলন করছে জাকারিয়া পিন্টু, সুলতান আলী টনি বিশ্বাস ও আবু সাঈদ খানের নেতৃত্বাধীন চক্র। তাদের তৎপরতায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে হার্ডিং ব্রিজ, লালন শাহ সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের ভিত্তি হুমকির মুখে। অন্যদিকে নাটোরের লালপুরে বৈধ বালু মহালের ইজারাদাররা প্রতিবন্ধকতার মুখে প্রতিবছর প্রায় ১০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়,২০০৮ সালে পরিবেশ রক্ষার নামে পদ্মা নদীর ১২টি পয়েন্ট থেকে ১০ লাখ কিউবিক ফুট বালু উত্তোলনের অনুমতি পায় মেসার্স বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শাওন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আনোয়ারুল হক মাসুমসহ তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে অনুমতির পরিমাণ ছাড়িয়ে তারা ব্যাপকভাবে নদী খনন শুরু করে। অংশীদারদের মধ্যেকার বিরোধ ও আদালতের মামলা সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ করলেও, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব আলম হানিফের প্রভাবে পুনরায় কার্যক্রম শুরু হয়। ১৭ বছর আগের হাইড্রোগ্রাফি জরিপের আদেশকে চিরস্থায়ী লাইসেন্স হিসেবে ব্যবহার করছে, যদিও পদ্মার গতিপথ ও গভীরতা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, অনুমতির চে‌য়ে বে‌শি বাাল‌গেট ব‌্যাবহার ক‌রে প্রতিদিন তারা শত শত বালগেট বালু তুলছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্মীরা যেন চোখ বন্ধ করে দায়িত্ব পালন করছেন। যেখানে নদী ছিল সেখানে এখন ফসলের মাঠ আর যেখানে বসতবাড়ি ছিল সেখানে গড়িয়েছে নদী। হার্ডিং ব্রিজ ও লালন শাহ সেতুর ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প মাত্র ৩-৪ কিলোমিটার দূরে তাই প্রকল্পটি ভূমিধসের ঝুঁকিতেও রয়েছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তনে বাড়ছে বন্যা ও ভাঙনের আশঙ্কা।

গত সপ্তাহে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঈশ্বরদী প্রশাসন ক্ষণিকের জন্য অভিযান চালালেও ৩ জুলাই থেকে পুনরায় সক্রিয় হয়েছে চক্রটি। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে নিষ্ক্রিয়। চক্রটির বিএনপি-আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশ করে সাংবাদিক ও স্থানীয়দের হুমকি-ধামকি দিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত রেখেছেন।

অন‍্যদিকে নাটোরের লালপুরের দিয়ার বাহাদুরপুর বালু মহাল সরকারি রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস। এইসব চক্রের কারণে ইজারাদাররা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। গত বছর রাসেল এন্টারপ্রাইজ ইজারা নিলেও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হয়ে মামলার শিকার হয়। চলতি বছরে মোল্লা এন্টারপ্রাইজ প্রায় ১০ কোটি টাকায় ইজারা নিলেও চক্রটি তাদের কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে। মাঝি-মাল্লাদের ওপর হামলা ও মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছে। স্পিডবোর্ডে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে ব্যবসায়ীদের ভয় দেখাচ্ছে চক্রটি।
মোল্লা এন্টারপ্রাইজের মালিক বলেন, এভাবে চললে ভবিষ্যতে কেউ ইজারা নেবে না। প্রশাসনকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে! পাবনার জেলা প্রশাসক মফিজুল ইসলাম জানান, এইসব অবৈধ বালু মহালের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে অভিযান চলমান আছে। তবে নৌ পুলিশের তৎপরতা বেশি থাকা প্রয়োজন।