তাঁতীবন্দ জমিদার বাড়ি পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার তাঁতীবন্দ ইউনিয়নের তাঁতীবন্দ গ্রামে অবস্থিত। এটি এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি। শত বছর আগের জমিদার বাড়িটির শেষ চিহ্ন হিসেবে থাকা ভবন দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ভেঙে যাচ্ছে,লতাপাতায় ঘিরে ধরেছে এই বাড়িটিকে।
বর্তমানে জমিদার বাড়ির শেষ চিহ্নটুকু ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। এখানে পাশাপাশি দুইটি বাড়ি রয়েছে। এ জমিদার বাড়ি থেকে জমিদার বংশের তৈরি করা মঠ বিজয় বাবুর মঠ জনসাধারণের কাছে বেশ পরিচিত। বাড়িটি গোবিন্দ চৌধুরীর জমিদার বাড়ি নামেও পরিচিত।
১৭০০ শতকের মাঝামাঝিতে জমিদার বাড়িটি উন্মুক্ত করা হয়। এর স্বত্বাধিকারী উপেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী। এ জমিদার বাড়ি নির্মাণ করতে ব্যবহার করা হয়েছে ইট, সুরকি ও রড। প্রাপ্ত তথ্য মতে,আনুমানিক ১৭০০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে জমিদার উপেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরীর হাতে এই জমিদার বংশ ও জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। এরপর একে একে এই জমিদার বংশধররা উক্ত জমিদারী তাদের নিজ স্বীয় গুণাবলির মাধ্যমে পরিচালনা করতে থাকেন। কিন্তু এই জমিদার বাড়ির ইতিহাসে জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর নামটি একটু আলাদাভাবে জায়গা করে নেয়। তার অসাধারণ গুণাবলীর কারণে। কারণ তার জমিদারী আমলেই উক্ত জমিদারী আরো বিশাল আকারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। তাই অনেকের কাছে উক্ত জমিদার বাড়ি তার নামেই বেশ পরিচিত। তিনি তার জমিদারী কঠোর নিয়ম এবং উদারতার মাধ্যমে পরিচালনা করে প্রজাদের কাছে সু-পরিচিত হয়ে উঠেন। সামর্থবান প্রজার কাছ থেকে নিয়মমাফিক খাজনা আদায় করতেন। যাতে কোনোরকম ছাড় দিতেন না। আবার যারা অসামর্থ্যবান প্রজা। তাদের কাছ থেকে তিনি জোর করে কোনো খাজনা আদায় করতেন না। উল্টো তাদের খাজনাগুলো মাফ করে দিতেন।
তার জমিদারী আমলে মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনিও অন্যান্য হিন্দু জমিদারদের থেকে একটুও ব্যতিক্রম ছিলেন না। ঐসময় তার জমিদারী এলাকায় মুসলমানরা কোরবানির জন্য গরু জবাই দিতে পারতেন না। এছাড়াও মুসলমানদের অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের উপরও ছিল নিষেধাজ্ঞা। বিজয় গোবিন্দ তার শৌখিন জীবনে চলাফেরা করার জন্য হাতিবহর ব্যবহার করতেন। ঐ হাতিবহরের খরচের জন্য তিনি প্রতিমাসে প্রজাদের কাছ থেকে আলাদাভাবে খাজনা আদায় করতেন।
পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলা এককালে জমিদারদের পদচারণায় মুখরিত ছিল। কথিত আছে, এখানে হিন্দু জমিদার বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর পাশাপাশি মুসলিম জমিদার আজিম চৌধুরীর বংশও বেশ প্রভাবশালী ছিল। তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল। তবে আজ সেই জমিদার বংশের ঐতিহ্যপূর্ণ স্থাপনাগুলো অযত্ন আর অবহেলায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
বিজয় গোবিন্দ চৌধুরীর বংশধরদের তৈরি করা দুইটি দৃষ্টিনন্দন মঠ বর্তমানে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিদিন বহু মানুষ এই মঠগুলো দেখতে আসেন। কিন্তু জমিদার বাড়ির অন্যান্য স্থাপনা, বিশেষত তাঁতীবন্দ জমিদার বাড়ি, কার্যকরী সংস্কারের অভাবে প্রায় নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।
স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, ঐতিহাসিক এই জমিদার বাড়িটির সংস্কার প্রয়োজন। তাঁরা চান, লতাপাতা পরিষ্কার করে দর্শনার্থীদের জন্য একটি উপযুক্ত বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হোক। তাঁদের বিশ্বাস, এর মাধ্যমে তাঁতীবন্দ গ্রাম অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে। ঐতিহ্য ও পর্যটনের সমন্বয়ে এই অঞ্চলের উন্নয়ন সম্ভব, যা স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।Edit