০১:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আপাতত অন্য হাসপাতালের চক্ষুবিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার পরার্মশ দিয়েছে।

চিকিৎসকসহ অন্যান্য কর্মী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকায় ’সেবার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া’ পর্যন্ত রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সব ধরনের সেবা বন্ধই থাকছে।

এ হাসপাতাল বন্ধে রোগীদের দুর্ভোগের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে শনিবার বিকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আপাতত অন্য হাসপাতালের চক্ষুবিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার পরারর্শ দিয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেছেন, অচলাবস্থা নিরসনে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছে। তারা আহতদের সঙ্গে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ অন্যান্য সেবাদানকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা করছেন।

“এই মুহূর্তে আমরা আলোচনার একটি ইতিবাচক ফলাফলের প্রত্যাশায় আছি। চিকিৎসাসেবার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হলেই হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা পুনরায় চালু করার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে চক্ষু চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এমন রোগীদের নিকটস্থ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।”

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কর্মচারীরা বুধবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করলে সকাল ১০টার পর তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় সেখানে চিকিৎসাধীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহতর এবং চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা।

দুপুরের দিকে সেনা সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। তবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে বিকালের দিকে। চিকিৎসক, কর্মচারীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে নিরাপত্তার দাবিতে সেদিন থেকেই হাসপাতালে আসা বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসক, কর্মচারীরা।

শনিবারও সেখানে সেবা কার্যক্রম বন্ধ আছে। টানা চার দিন ধরে চক্ষু চিকিৎসায় দেশের প্রধান হাসপাতালটি বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। ভর্তি অধিকাংশ রোগী হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। শুধু আন্দোলনে আহতরা হাসপাতালে অবস্থান করছেন।

আর জরুরি সেবা বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন।

বিকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সব সেবা বন্ধ থাকলেও, জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের পথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন তুলে ধরে মন্ত্রণালয় দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, “এই পরিস্থিতিতে সারাদেশ থেকে আগত চক্ষু রোগীদের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা সেবাবঞ্চিত সকল রোগীর প্রতি আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।”

জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আকবর কামাল শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেদিনের ঘটনায় চিকিৎসক, কর্মচারীদের সঙ্গে আন্দোলনে আহতদের কয়েকজনও আহত হয়েছেন। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা।

তিনি বলেন, আন্দোলনকারী আহতরা হাসপাতালের আট থেকে ১০ জন কর্মচারীর একটি তালিকা দিয়েছে। তারা বলছে ওই কয়েকজন বাদে বাকিরা হাসপাতালে এসে সেবা দিতে কোনো বাধা নেই।

”আমরাও তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি যে হাসপাতালটি বন্ধ থাকায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। একটা ভালো সমাধান হবে আশা করি।”

উন্নত চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ তুলে গত রোববার চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আন্দোলনে আহত চারজন বিষপান করেন। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তারা সহযোদ্ধাদের নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করেন।

প্রায় দেড় ঘণ্টা বাদে সেনাবাহিনীর সহায়তায় অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্তি পান হাসপাতাল পরিচালক। এর মধ্যে আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ গায়ে কেরোসিন-পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য।

পরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং আহতদের আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় নিরাপত্তার দাবিতে বুধবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছিলেন হাসপাতাল কর্মচারীরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Khaled Hossain

জনপ্রিয় খবর

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের শুভেচ্ছা

নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বন্ধ চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট

Update Time : ১০:৪০:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আপাতত অন্য হাসপাতালের চক্ষুবিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার পরার্মশ দিয়েছে।

চিকিৎসকসহ অন্যান্য কর্মী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকায় ’সেবার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত না হওয়া’ পর্যন্ত রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে সব ধরনের সেবা বন্ধই থাকছে।

এ হাসপাতাল বন্ধে রোগীদের দুর্ভোগের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে শনিবার বিকালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় আপাতত অন্য হাসপাতালের চক্ষুবিভাগে চিকিৎসা নেওয়ার পরারর্শ দিয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন বলেছেন, অচলাবস্থা নিরসনে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে একটি প্রতিনিধিদল পাঠানো হয়েছে। তারা আহতদের সঙ্গে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ অন্যান্য সেবাদানকারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে আলোচনা করছেন।

“এই মুহূর্তে আমরা আলোচনার একটি ইতিবাচক ফলাফলের প্রত্যাশায় আছি। চিকিৎসাসেবার অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত হলেই হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা সেবা পুনরায় চালু করার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন ব্যবস্থা হিসেবে চক্ষু চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে এমন রোগীদের নিকটস্থ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।”

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের কর্মচারীরা বুধবার সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করলে সকাল ১০টার পর তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় সেখানে চিকিৎসাধীন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহতর এবং চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা।

দুপুরের দিকে সেনা সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেন। তবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে বিকালের দিকে। চিকিৎসক, কর্মচারীদের ওপর হামলার অভিযোগ এনে নিরাপত্তার দাবিতে সেদিন থেকেই হাসপাতালে আসা বন্ধ রেখেছেন চিকিৎসক, কর্মচারীরা।

শনিবারও সেখানে সেবা কার্যক্রম বন্ধ আছে। টানা চার দিন ধরে চক্ষু চিকিৎসায় দেশের প্রধান হাসপাতালটি বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। ভর্তি অধিকাংশ রোগী হাসপাতাল ছেড়ে গেছেন। শুধু আন্দোলনে আহতরা হাসপাতালে অবস্থান করছেন।

আর জরুরি সেবা বন্ধ থাকায় দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই এসে চিকিৎসা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন।

বিকালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সব সেবা বন্ধ থাকলেও, জুলাই অভ্যুত্থানে আহতদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের পথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছেন তুলে ধরে মন্ত্রণালয় দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, “এই পরিস্থিতিতে সারাদেশ থেকে আগত চক্ষু রোগীদের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমরা সেবাবঞ্চিত সকল রোগীর প্রতি আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ করছি।”

জুলাই ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আকবর কামাল শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেদিনের ঘটনায় চিকিৎসক, কর্মচারীদের সঙ্গে আন্দোলনে আহতদের কয়েকজনও আহত হয়েছেন। দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন তারা।

তিনি বলেন, আন্দোলনকারী আহতরা হাসপাতালের আট থেকে ১০ জন কর্মচারীর একটি তালিকা দিয়েছে। তারা বলছে ওই কয়েকজন বাদে বাকিরা হাসপাতালে এসে সেবা দিতে কোনো বাধা নেই।

”আমরাও তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি যে হাসপাতালটি বন্ধ থাকায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। একটা ভালো সমাধান হবে আশা করি।”

উন্নত চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ তুলে গত রোববার চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আন্দোলনে আহত চারজন বিষপান করেন। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তারা সহযোদ্ধাদের নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালের পরিচালককে অবরুদ্ধ করেন।

প্রায় দেড় ঘণ্টা বাদে সেনাবাহিনীর সহায়তায় অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্তি পান হাসপাতাল পরিচালক। এর মধ্যে আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ গায়ে কেরোসিন-পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে পুলিশের ভাষ্য।

পরিচালককে অবরুদ্ধ করে রাখা এবং আহতদের আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় নিরাপত্তার দাবিতে বুধবার সকাল থেকে কর্মবিরতি পালন করছিলেন হাসপাতাল কর্মচারীরা।