০৭:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শাওনের ‘বিজ্ঞানপ্রিয়’ গড়ে তোলার গল্প

  • প্রথম আলো
  • Update Time : ০৭:৩৬:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫
  • ৩৮ Time View

‘এত প্রশ্ন করলে মানুষ বোকা ভাববে’—শিক্ষকের একটি কথাই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল শাওনের। ছোটবেলায় প্রচুর প্রশ্ন করতেন তিনি। ডুব দিতে চাইতেন প্রকৃতির ঘটনাচক্রে। কেন নর্থ স্টার বা ধ্রুবতারা আকাশের একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে, চাঁদ কেন নিজ অক্ষে ঘুরতে থাকলেও আমরা এর উল্টো দিকটা দেখতে পাই না? একটা ‘কেন’র উত্তর খুঁজতে গিয়ে অসংখ্য ‘কেন’ দাঁড়িয়ে যেত। রীতিমতো বিরক্ত হতেন অনেকে। ফলে কৌতূহলী এই অভিযানে কাউকেই পাশে পাননি শাওন মাহমুদ।
শুধু কৌতূহল নয়, জীবনের প্রয়োজনেও যে প্রশ্ন করা দরকার, শাওন তা বুঝতে পারেন নবম শ্রেণিতে পা রেখে। হাতে প্রথমবার বিজ্ঞানের বই আসে সে সময়। ক্লাসভর্তি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। সবার মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে জিপিএর দুশ্চিন্তা। বিজ্ঞান বইগুলোর একটা ক্ষুদ্র অংশই ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে বারবার পরীক্ষায় আসে। ভালো ফলের জন্য এর বাইরে কোনো কিছু জানার দরকার হয় না। ফলে বিজ্ঞানের বেশির ভাগ চমৎকার বিষয়গুলো অজানাই থেকে যায়। বিদ্যুৎচুম্বক, ক্যালকুলাস, জৈব যৌগের মতো মুগ্ধকর বিষয়গুলোর ‘রিয়েল লাইফ’ প্রয়োগ শিক্ষকদের কাছে পরিষ্কার না থাকায় শিক্ষার্থীদের সামনে তা ভয়ংকর রূপে এসে দাঁড়ায়।

ছোটবেলা থেকেই একটা সংগঠন গড়ে তোলার কথা ভাবতেন শাওন মাহমুদ। যেখানে যে কেউ যেকোনো প্রশ্ন করতে পারবে। কোনো প্রশ্নকেই ‘অবান্তর’ ট্যাগ দেওয়া হবে না। বিজ্ঞানকে বুঝতে কৌতূহল মেটানো জরুরি। আর ‘গ্লোবাল কোলাবোরেশন’ এবং বিশ্বে টিকে থাকার জন্য বিজ্ঞানকে বোঝা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে ‘বিজ্ঞানপ্রিয়’ নামে একটি সংগঠনের যাত্রা শুরু করেন শাওন। তৈরি করেন ছোট একটা দল, যেখানে সবাই শাওনের মতোই শিখতে ও শেখাতে ভালোবাসেন। বন্ধুদের জানান, মনের কোণে লুকিয়ে থাকা যেকোনো কৌতূহল যেন তারা এখানে জানায়। একেকটি প্রশ্ন দলের কাছে যেন নতুন কিছু নিয়ে পড়াশোনা করার একেকটি সুযোগ।

গবেষণাপত্র পড়ে ও শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রশ্নগুলো নিয়ে অনলাইন গ্রুপে আলোচনা করতেন তাঁরা। অল্প সময়েই বড় হয়ে ওঠে গ্রুপটি। বড় হয় দল। বাড়তে থাকে জনপ্রিয়তা। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে ১০ লাখ মানুষ অনলাইনে যুক্ত হয় বিজ্ঞানপ্রিয় এই সংগঠনে। পর্যায়ক্রমে বাংলা ভাষার বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞানের নেটওয়ার্ক হয়ে ওঠে ‘বিজ্ঞানপ্রিয়’।

পাশাপাশি দেশ–বিদেশের বিজ্ঞানের গবেষণাগুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটা ডিজিটাল ক্রিয়েটিভ স্টুডিও তৈরি করেন শাওন মাহমুদ। ১টি ‘কেন’র উত্তর দিলে যে ১০টি ‘কেন’ জন্ম নেবে, সেগুলো অজানা নয় তাঁর। সবকিছু মাথায় রেখে নিখুঁত একেকটি কনটেন্ট তৈরি করে তাঁর দল। এখানেও জনপ্রিয়তা পায় বিজ্ঞানপ্রিয়। ছয় লাখ ফলোয়ার যুক্ত হয় তাঁর ফেসবুক পেজে। বাড়তে থাকে আগ্রহ। বাড়তে থাকে সচেতনতা।

বিজ্ঞানপ্রিয়র অফলাইন ও অনলাইন কার্যক্রমের একটা বড় অংশ গুজব ও অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে। সচেতন মানুষেরা এমন একটি সংগঠনের গুরুত্ব বুঝতে পারেন কোভিডের সময়। কোভিডকে ঘিরে হাজারো গুজব ও অপচর্চা ছিল ভিন্ন আরেক মহামারির মতো, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল। সে সময় গুজব ও অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে যুক্তি খণ্ডন করে প্রতিবাদমূলক প্রচারণা চালান শাওনরা। অল্প সময়েই অনলাইন জগতে এক নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি পায় বিজ্ঞানপ্রিয়।
জনপ্রিয়তা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আঙুল তোলায় একটা শ্রেণির ক্রোধের শিকার হয়ে ওঠে বিজ্ঞানপ্রিয়। ২০২১ সালের ২১ জুলাই মধ্যরাতে ভয়াবহ সাইবার হামলার শিকার হয় সংগঠনটি। ফেসবুক পেজ হ্যাক করে প্রকাশ করা হয় অশালীন ছবি। নিষ্ক্রিয় করা হয় ফেসবুক গ্রুপ এবং ভেঙে ফেলা হয় ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা।

সাত দিনের আপ্রাণ চেষ্টায় পেজটি ফিরিয়ে আনা হলেও ‘অশালীন’ কনটেন্ট শেয়ার করায়, পরদিনই তা নিষ্ক্রিয় করে দেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে বিজ্ঞানপ্রিয়। তবে ভেঙে পড়েননি শাওন মাহমুদ। এক মাস সময় নেন তিনি। আবার গঠন করেন দল। শূন্য থেকে শুরু হয় সবকিছু। কিছুদিনের মাথায় দ্বিতীয়বার সাইবার হামলার শিকার হয় বিজ্ঞানপ্রিয়। দ্বিতীয়বার শূন্য থেকে শুরু করেন শাওন।
২০২২ সালে স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে ‘প্রজেক্ট প্রাচি’র পরিকল্পনা করেন শাওন। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ হাজার পরিবারের অন্তত একজন সদস্যকে প্রাথমিক চিকিৎসায় দক্ষ করে তোলাই ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহায়তায় ইতিমধ্যে ২ শতাধিক শিক্ষার্থীকে ১৮ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ দেয় বিজ্ঞানপ্রিয়। প্রশিক্ষণ শেষে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা হয় মূল্যায়ন।

ডিজিটাল বিজ্ঞানশিক্ষায় অবদানের জন্য গত বছর আন্তর্জাতিক প্রিন্সেস ডায়ানা সম্মাননা পান শাওন মাহমুদ। ব্রিটিশ যুবরাজ চার্লসের প্রথম স্ত্রী প্রিন্সেস ডায়ানার স্মরণে ৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণদের এই সম্মাননা দেওয়া হয়। তা ছাড়া বিজ্ঞানভিত্তিক ক্রিয়েটিভ স্টুডিওর জন্য ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট থেকে ‘ব্রাইটস্কিল ইমার্জিং ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’সহ একটি জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন শাওন।
জটিল বিষয়কে খুব সহজে তুলে ধরার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে শাওনের। তারই আরেকটি উদাহরণ এবারের বইমেলায় প্রকাশিত ‘থার্টি সেকেন্ড কোয়ান্টাম থিওরি’। ব্রিটিশ লেখক ব্রায়ান ক্লেগ সম্পাদিত এই বই সহজ বাংলায় অনুবাদ করেছেন শাওন মাহমুদ। বইটি প্রকাশিত হয়েছে অন্বেষা প্রকাশন থেকে। কোয়ান্টাম তত্ত্বকে বেশ সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বইটিতে।

একটা রাষ্ট্র বাইরের আক্রমণ থেকে কতটুকু নিরাপদ থাকবে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে তার কতটুকু কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় থাকবে, তা নির্ভর করে দেশটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে কতটুকু শিক্ষিত, তার ওপর। এ জন্য প্রয়োজন যথাযথ বিজ্ঞানশিক্ষার। এ ক্ষেত্রে শাওন মাহমুদের মতো বিজ্ঞানপ্রেমী ও সচেতন মানুষদের ভূমিকা অনন্য। তিনি শুধু একজন শিক্ষকই নন, বরং একজন অনুপ্রেরণাদাতা, যিনি বিজ্ঞানকে বইয়ের পাতা থেকে টেনে এনে বাস্তব জীবনের প্রয়োজন ও কৌতূহলের সঙ্গে যুক্ত করেছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

News Editor

জনপ্রিয় খবর

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের শুভেচ্ছা

শাওনের ‘বিজ্ঞানপ্রিয়’ গড়ে তোলার গল্প

Update Time : ০৭:৩৬:২৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

‘এত প্রশ্ন করলে মানুষ বোকা ভাববে’—শিক্ষকের একটি কথাই জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল শাওনের। ছোটবেলায় প্রচুর প্রশ্ন করতেন তিনি। ডুব দিতে চাইতেন প্রকৃতির ঘটনাচক্রে। কেন নর্থ স্টার বা ধ্রুবতারা আকাশের একই জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে, চাঁদ কেন নিজ অক্ষে ঘুরতে থাকলেও আমরা এর উল্টো দিকটা দেখতে পাই না? একটা ‘কেন’র উত্তর খুঁজতে গিয়ে অসংখ্য ‘কেন’ দাঁড়িয়ে যেত। রীতিমতো বিরক্ত হতেন অনেকে। ফলে কৌতূহলী এই অভিযানে কাউকেই পাশে পাননি শাওন মাহমুদ।
শুধু কৌতূহল নয়, জীবনের প্রয়োজনেও যে প্রশ্ন করা দরকার, শাওন তা বুঝতে পারেন নবম শ্রেণিতে পা রেখে। হাতে প্রথমবার বিজ্ঞানের বই আসে সে সময়। ক্লাসভর্তি বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী। সবার মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে জিপিএর দুশ্চিন্তা। বিজ্ঞান বইগুলোর একটা ক্ষুদ্র অংশই ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে বারবার পরীক্ষায় আসে। ভালো ফলের জন্য এর বাইরে কোনো কিছু জানার দরকার হয় না। ফলে বিজ্ঞানের বেশির ভাগ চমৎকার বিষয়গুলো অজানাই থেকে যায়। বিদ্যুৎচুম্বক, ক্যালকুলাস, জৈব যৌগের মতো মুগ্ধকর বিষয়গুলোর ‘রিয়েল লাইফ’ প্রয়োগ শিক্ষকদের কাছে পরিষ্কার না থাকায় শিক্ষার্থীদের সামনে তা ভয়ংকর রূপে এসে দাঁড়ায়।

ছোটবেলা থেকেই একটা সংগঠন গড়ে তোলার কথা ভাবতেন শাওন মাহমুদ। যেখানে যে কেউ যেকোনো প্রশ্ন করতে পারবে। কোনো প্রশ্নকেই ‘অবান্তর’ ট্যাগ দেওয়া হবে না। বিজ্ঞানকে বুঝতে কৌতূহল মেটানো জরুরি। আর ‘গ্লোবাল কোলাবোরেশন’ এবং বিশ্বে টিকে থাকার জন্য বিজ্ঞানকে বোঝা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষে ‘বিজ্ঞানপ্রিয়’ নামে একটি সংগঠনের যাত্রা শুরু করেন শাওন। তৈরি করেন ছোট একটা দল, যেখানে সবাই শাওনের মতোই শিখতে ও শেখাতে ভালোবাসেন। বন্ধুদের জানান, মনের কোণে লুকিয়ে থাকা যেকোনো কৌতূহল যেন তারা এখানে জানায়। একেকটি প্রশ্ন দলের কাছে যেন নতুন কিছু নিয়ে পড়াশোনা করার একেকটি সুযোগ।

গবেষণাপত্র পড়ে ও শিক্ষকদের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রশ্নগুলো নিয়ে অনলাইন গ্রুপে আলোচনা করতেন তাঁরা। অল্প সময়েই বড় হয়ে ওঠে গ্রুপটি। বড় হয় দল। বাড়তে থাকে জনপ্রিয়তা। দেশ ও দেশের বাইরে থেকে ১০ লাখ মানুষ অনলাইনে যুক্ত হয় বিজ্ঞানপ্রিয় এই সংগঠনে। পর্যায়ক্রমে বাংলা ভাষার বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞানের নেটওয়ার্ক হয়ে ওঠে ‘বিজ্ঞানপ্রিয়’।

পাশাপাশি দেশ–বিদেশের বিজ্ঞানের গবেষণাগুলো সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য একটা ডিজিটাল ক্রিয়েটিভ স্টুডিও তৈরি করেন শাওন মাহমুদ। ১টি ‘কেন’র উত্তর দিলে যে ১০টি ‘কেন’ জন্ম নেবে, সেগুলো অজানা নয় তাঁর। সবকিছু মাথায় রেখে নিখুঁত একেকটি কনটেন্ট তৈরি করে তাঁর দল। এখানেও জনপ্রিয়তা পায় বিজ্ঞানপ্রিয়। ছয় লাখ ফলোয়ার যুক্ত হয় তাঁর ফেসবুক পেজে। বাড়তে থাকে আগ্রহ। বাড়তে থাকে সচেতনতা।

বিজ্ঞানপ্রিয়র অফলাইন ও অনলাইন কার্যক্রমের একটা বড় অংশ গুজব ও অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে। সচেতন মানুষেরা এমন একটি সংগঠনের গুরুত্ব বুঝতে পারেন কোভিডের সময়। কোভিডকে ঘিরে হাজারো গুজব ও অপচর্চা ছিল ভিন্ন আরেক মহামারির মতো, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল। সে সময় গুজব ও অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে যুক্তি খণ্ডন করে প্রতিবাদমূলক প্রচারণা চালান শাওনরা। অল্প সময়েই অনলাইন জগতে এক নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে পরিচিতি পায় বিজ্ঞানপ্রিয়।
জনপ্রিয়তা ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে আঙুল তোলায় একটা শ্রেণির ক্রোধের শিকার হয়ে ওঠে বিজ্ঞানপ্রিয়। ২০২১ সালের ২১ জুলাই মধ্যরাতে ভয়াবহ সাইবার হামলার শিকার হয় সংগঠনটি। ফেসবুক পেজ হ্যাক করে প্রকাশ করা হয় অশালীন ছবি। নিষ্ক্রিয় করা হয় ফেসবুক গ্রুপ এবং ভেঙে ফেলা হয় ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা।

সাত দিনের আপ্রাণ চেষ্টায় পেজটি ফিরিয়ে আনা হলেও ‘অশালীন’ কনটেন্ট শেয়ার করায়, পরদিনই তা নিষ্ক্রিয় করে দেয় ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে বিজ্ঞানপ্রিয়। তবে ভেঙে পড়েননি শাওন মাহমুদ। এক মাস সময় নেন তিনি। আবার গঠন করেন দল। শূন্য থেকে শুরু হয় সবকিছু। কিছুদিনের মাথায় দ্বিতীয়বার সাইবার হামলার শিকার হয় বিজ্ঞানপ্রিয়। দ্বিতীয়বার শূন্য থেকে শুরু করেন শাওন।
২০২২ সালে স্কুল–কলেজের শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে ‘প্রজেক্ট প্রাচি’র পরিকল্পনা করেন শাওন। ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০ হাজার পরিবারের অন্তত একজন সদস্যকে প্রাথমিক চিকিৎসায় দক্ষ করে তোলাই ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহায়তায় ইতিমধ্যে ২ শতাধিক শিক্ষার্থীকে ১৮ ঘণ্টার প্রশিক্ষণ দেয় বিজ্ঞানপ্রিয়। প্রশিক্ষণ শেষে ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা হয় মূল্যায়ন।

ডিজিটাল বিজ্ঞানশিক্ষায় অবদানের জন্য গত বছর আন্তর্জাতিক প্রিন্সেস ডায়ানা সম্মাননা পান শাওন মাহমুদ। ব্রিটিশ যুবরাজ চার্লসের প্রথম স্ত্রী প্রিন্সেস ডায়ানার স্মরণে ৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণদের এই সম্মাননা দেওয়া হয়। তা ছাড়া বিজ্ঞানভিত্তিক ক্রিয়েটিভ স্টুডিওর জন্য ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউট থেকে ‘ব্রাইটস্কিল ইমার্জিং ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’সহ একটি জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন শাওন।
জটিল বিষয়কে খুব সহজে তুলে ধরার বিশেষ দক্ষতা রয়েছে শাওনের। তারই আরেকটি উদাহরণ এবারের বইমেলায় প্রকাশিত ‘থার্টি সেকেন্ড কোয়ান্টাম থিওরি’। ব্রিটিশ লেখক ব্রায়ান ক্লেগ সম্পাদিত এই বই সহজ বাংলায় অনুবাদ করেছেন শাওন মাহমুদ। বইটি প্রকাশিত হয়েছে অন্বেষা প্রকাশন থেকে। কোয়ান্টাম তত্ত্বকে বেশ সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে বইটিতে।

একটা রাষ্ট্র বাইরের আক্রমণ থেকে কতটুকু নিরাপদ থাকবে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে তার কতটুকু কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় থাকবে, তা নির্ভর করে দেশটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে কতটুকু শিক্ষিত, তার ওপর। এ জন্য প্রয়োজন যথাযথ বিজ্ঞানশিক্ষার। এ ক্ষেত্রে শাওন মাহমুদের মতো বিজ্ঞানপ্রেমী ও সচেতন মানুষদের ভূমিকা অনন্য। তিনি শুধু একজন শিক্ষকই নন, বরং একজন অনুপ্রেরণাদাতা, যিনি বিজ্ঞানকে বইয়ের পাতা থেকে টেনে এনে বাস্তব জীবনের প্রয়োজন ও কৌতূহলের সঙ্গে যুক্ত করেছেন।