০৭:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাবনায় নিশ্চিহ্নের পথে কবি প্রমথ চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি

  • হৃদয় হোসাইন
  • Update Time : ১১:৩৪:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
  • ৩০ Time View

জন্মভূমি পাবনায় খানিকটা অবহেলিত রয়ে গেছেন প্রমথ চৌধুরী। জন্ম-মৃত্যু বিশেষ দিবসে থাকেন স্মৃতির অন্তরালে। তাঁর নামে স্মরণে জেলার কোথাও কোনো স্থাপনা চোখে পড়ে না।

কবি প্রমথ চৌধুরী বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, যিনি বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, প্রবন্ধকার, গল্পকার। কবি প্রমথনাথ চৌধুরী ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ছদ্মনাম ছিল বীরবল।

প্রমথ চৌধুরী বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক হিসাবে প্রসিদ্ধ। সবুজপত্র পত্রিকা সম্পাদনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে চলিত রীতি প্রবর্তন করেন। এছাড়া বাংলা সাহিত্যে প্রথম বিদ্রূপাত্মক প্রবন্ধ রচনা করেন। ছোটগল্প ও সনেট রচনাতেও তাঁর বিশিষ্ট অবদান রয়েছে। তিনি সবুজপত্র এবং বিশ্বভারতী পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

প্রমথ চৌধুরী ছাত্রজীবনে ছিলেন মেধাবী। তিনি কলকাতা হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে এফএ পাস করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে দর্শনশাস্ত্রে বিএ অনার্স, এবং ১৮৯০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলাত যান।

বিলাত থেকে ব্যারিস্টারি সম্পন্ন করে দেশে ফিরে এসে আইন পেশায় যোগ দেন এবং পরবর্তীতে আইনপেশা ছেড়ে কিছু সময় ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন। পরে সম্পূর্ণভাবে সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘জগত্তারিণী পদক’ লাভ করেন।

প্রমথ চৌধুরী ব্যারিস্টারি পাশ করে বিলাত থেকে কলকাতায় ফিরে এসে কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে কিছু সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পাশাপাশি তিনি ঠাকুর এস্টেটের ব্যবস্থাপক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইঝি জামাতা। রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা ইন্দিরা দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কলকাতার খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার আশুতোষ চৌধুরীর সাথে প্রমথ চৌধুরীর সম্পর্ক ছিল অগ্রজ-অনুগত। রবীন্দ্রনাথের আরেক বড় ভাই হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা প্রতিভা দেবীর সঙ্গে আশুতোষ চৌধুরীর বিবাহ হয়।

প্রবন্ধ সাহিত্যের জন্য তিনি বেশি বিখ্যাত। ১৮৯৩ সালে সাধনা পত্রিকায় তাঁর প্রথম প্রবন্ধ ‘জয়দেব’ প্রকাশিত হয়। তাঁর নেতৃত্বে বাংলা সাহিত্যে নতুন গদ্যধারা সূচিত হয়। তিনি বাংলা সাহিত্যে ইতালীয় রূপবন্ধের সনেট লিখেছেন।

তাঁর লেখা প্রবন্ধগ্রন্থগুলো হলো:
তেল-নুন-লাকড়ীবীরবলের হালখাতানানাকথাভাষার কথাআমাদের শিক্ষারায়তের কথানানাচর্চা
গল্পগ্রন্থগুলো হলো:
চার-ইয়ারী কথাআহুতিনীললোহিতঅনুকথাসপ্তকঘোষালে ত্রিকথা
কাব্যগ্রন্থগুলো হলো:
সনেট পঞ্চাশৎপদচারণ

তাঁর প্রবর্তিত গদ্যরীতিতে সবুজপত্র নামে বিখ্যাত সাহিত্যপত্র ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। চাটমোহর উপজেলায় কবির একটি বাড়ি আছে, যা এখন জরাজীর্ণ। অযত্ন ও অবহেলায় শেষ স্মৃতি চিহ্নটি নিশ্চিহ্নের পথে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

News Editor

জনপ্রিয় খবর

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের শুভেচ্ছা

পাবনায় নিশ্চিহ্নের পথে কবি প্রমথ চৌধুরীর পৈতৃক বাড়ি

Update Time : ১১:৩৪:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫

জন্মভূমি পাবনায় খানিকটা অবহেলিত রয়ে গেছেন প্রমথ চৌধুরী। জন্ম-মৃত্যু বিশেষ দিবসে থাকেন স্মৃতির অন্তরালে। তাঁর নামে স্মরণে জেলার কোথাও কোনো স্থাপনা চোখে পড়ে না।

কবি প্রমথ চৌধুরী বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, যিনি বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে সক্রিয় ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে কবি, প্রবন্ধকার, গল্পকার। কবি প্রমথনাথ চৌধুরী ১৮৬৮ সালের ৭ আগস্ট পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর ছদ্মনাম ছিল বীরবল।

প্রমথ চৌধুরী বাংলা গদ্যে চলিত রীতির প্রবর্তক হিসাবে প্রসিদ্ধ। সবুজপত্র পত্রিকা সম্পাদনার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে চলিত রীতি প্রবর্তন করেন। এছাড়া বাংলা সাহিত্যে প্রথম বিদ্রূপাত্মক প্রবন্ধ রচনা করেন। ছোটগল্প ও সনেট রচনাতেও তাঁর বিশিষ্ট অবদান রয়েছে। তিনি সবুজপত্র এবং বিশ্বভারতী পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

প্রমথ চৌধুরী ছাত্রজীবনে ছিলেন মেধাবী। তিনি কলকাতা হেয়ার স্কুল থেকে এন্ট্রান্স এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে এফএ পাস করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে দর্শনশাস্ত্রে বিএ অনার্স, এবং ১৮৯০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম শ্রেণীতে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ব্যারিস্টারি পড়ার জন্য বিলাত যান।

বিলাত থেকে ব্যারিস্টারি সম্পন্ন করে দেশে ফিরে এসে আইন পেশায় যোগ দেন এবং পরবর্তীতে আইনপেশা ছেড়ে কিছু সময় ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা করেন। পরে সম্পূর্ণভাবে সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘জগত্তারিণী পদক’ লাভ করেন।

প্রমথ চৌধুরী ব্যারিস্টারি পাশ করে বিলাত থেকে কলকাতায় ফিরে এসে কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসা শুরু করেন। পরবর্তীতে কিছু সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। পাশাপাশি তিনি ঠাকুর এস্টেটের ব্যবস্থাপক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন।

তিনি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাইঝি জামাতা। রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা ইন্দিরা দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কলকাতার খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার আশুতোষ চৌধুরীর সাথে প্রমথ চৌধুরীর সম্পর্ক ছিল অগ্রজ-অনুগত। রবীন্দ্রনাথের আরেক বড় ভাই হেমেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কন্যা প্রতিভা দেবীর সঙ্গে আশুতোষ চৌধুরীর বিবাহ হয়।

প্রবন্ধ সাহিত্যের জন্য তিনি বেশি বিখ্যাত। ১৮৯৩ সালে সাধনা পত্রিকায় তাঁর প্রথম প্রবন্ধ ‘জয়দেব’ প্রকাশিত হয়। তাঁর নেতৃত্বে বাংলা সাহিত্যে নতুন গদ্যধারা সূচিত হয়। তিনি বাংলা সাহিত্যে ইতালীয় রূপবন্ধের সনেট লিখেছেন।

তাঁর লেখা প্রবন্ধগ্রন্থগুলো হলো:
তেল-নুন-লাকড়ীবীরবলের হালখাতানানাকথাভাষার কথাআমাদের শিক্ষারায়তের কথানানাচর্চা
গল্পগ্রন্থগুলো হলো:
চার-ইয়ারী কথাআহুতিনীললোহিতঅনুকথাসপ্তকঘোষালে ত্রিকথা
কাব্যগ্রন্থগুলো হলো:
সনেট পঞ্চাশৎপদচারণ

তাঁর প্রবর্তিত গদ্যরীতিতে সবুজপত্র নামে বিখ্যাত সাহিত্যপত্র ইতিহাসে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। চাটমোহর উপজেলায় কবির একটি বাড়ি আছে, যা এখন জরাজীর্ণ। অযত্ন ও অবহেলায় শেষ স্মৃতি চিহ্নটি নিশ্চিহ্নের পথে।