০৭:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ১৬ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধে ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ, আতঙ্কে ৭০০ পরিবার

  • Reporter Name
  • Update Time : ০২:১২:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫
  • ২৫ Time View

শরীয়তপুরের জাজিরার মাঝিকান্দি এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভাঙন ঠেকাতে দুদিন ধরে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো। সেখানে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে অন্তত ৭০০ পরিবার।

মঙ্গলবার দুপুর থেকে শতাধিক শ্রমিক ও দুটি বার্জ দিয়ে ভাঙনকবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। এর ফলে রাত থেকে নতুন করে আর কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েনি বলে পাউবো জানিয়েছে।

স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পদ্মা নদীতে বিলীন হবে এলাকার রাস্তাাঘাট, হাট-বাজারসহ শতাধিক বসতবাড়ি। জাজিরা উপজেলার আলম খাঁর কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি ও ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামের অন্তত ৭০০ পরিবার এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে আছেন।

ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। যদিও তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সোমবার বিকালে পদ্মার ভাঙনে জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট এলাকার পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের ২০০ মিটার বিলীন হয়ে যায়। এতে পদ্মা পারের ১০টি বসতঘর ও নয়টি দোকানঘর ভাঙনের শিকার হয়। এ ছাড়া বেশ কিছু দোকানপাট ও বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

পাউবো জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাজিরার পদ্মা সেতু ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার ভাটিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের ৩ নভেম্বরে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট এলাকায় বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে। এ বছর বাঁধটির সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পাউবোকে। দুই কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু করে তারা।

গত কোরবানির ঈদের দিন ভোররাতে জিরো পয়েন্টে আবারও ভাঙন দেখা দেয়। ওই সময় বাঁধের আড়াইশ মিটার অংশ নদীতে তলিয়ে যায়। ওই সময় ১৩টি বসতঘর ও দুটি দোকান ঘর সরিয়ে নেন এলাকাবাসী।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওয়াহিদ হোসেন, জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায়, পাউবো ফরিদপুরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শাজাহান সিরাজ, পাউবো শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

জাজিরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০টি পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, “সোমবার রাত থেকে নতুন করে না ভাঙলেও আমরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।”

মঙ্গল মাঝির ঘাট বাজারের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন দেওয়ান বলেন, “আকস্মিক ভাঙনের কারণে শ্রমিক সংকট শুরু হয়েছে। পাশাপাশি তিন দিন ধরে প্রচন্ড বৃষ্টি, তাতে আমাদের অনেক কষ্ট বেড়ে গেছে।

“এজন্য পরিবারের সদস্যরাই নিজেদের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। যে কোনো উপায়ে ভাঙন রোধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি আমরা।”

স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, “নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পাড়ের কাছে চলে আসায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছর থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা এলাকাবাসী আতঙ্কের মধ্যে আছি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।”

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, “ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ পুনর্নিমাণের চেষ্টা চলছে। বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়া ৩০টি পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে।

“যাদের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে, তাদের মধ্যে দুই বান্ডেল টিন ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছে প্রশাসন।”

শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, “আমরা মঙ্গলবার দুপুর থেকে জরুরি কাজের অংশ হিসেবে ভাঙন কবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছি।”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

News Editor

বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিসিবি পরিচালক আসিফ আকবর

পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধে ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ, আতঙ্কে ৭০০ পরিবার

Update Time : ০২:১২:২২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫

শরীয়তপুরের জাজিরার মাঝিকান্দি এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধে ভাঙন ঠেকাতে দুদিন ধরে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলাচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড-পাউবো। সেখানে ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে অন্তত ৭০০ পরিবার।

মঙ্গলবার দুপুর থেকে শতাধিক শ্রমিক ও দুটি বার্জ দিয়ে ভাঙনকবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। এর ফলে রাত থেকে নতুন করে আর কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বসতবাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েনি বলে পাউবো জানিয়েছে।

স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পদ্মা নদীতে বিলীন হবে এলাকার রাস্তাাঘাট, হাট-বাজারসহ শতাধিক বসতবাড়ি। জাজিরা উপজেলার আলম খাঁর কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি ও ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রামের অন্তত ৭০০ পরিবার এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে আছেন।

ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। যদিও তাতে খুব একটা কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সোমবার বিকালে পদ্মার ভাঙনে জাজিরা উপজেলার মাঝিরঘাট এলাকার পদ্মা সেতু প্রকল্প রক্ষা বাঁধের ২০০ মিটার বিলীন হয়ে যায়। এতে পদ্মা পারের ১০টি বসতঘর ও নয়টি দোকানঘর ভাঙনের শিকার হয়। এ ছাড়া বেশ কিছু দোকানপাট ও বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

পাউবো জানায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে জাজিরার পদ্মা সেতু ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত দুই কিলোমিটার ভাটিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ।

গত বছরের ৩ নভেম্বরে মাঝিরঘাট জিরো পয়েন্ট এলাকায় বাঁধটির প্রায় ১০০ মিটার ধসে পড়ে। এ বছর বাঁধটির সংস্কারে দায়িত্ব দেওয়া হয় পাউবোকে। দুই কোটি ৮৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই স্থানে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলার কাজ শুরু করে তারা।

গত কোরবানির ঈদের দিন ভোররাতে জিরো পয়েন্টে আবারও ভাঙন দেখা দেয়। ওই সময় বাঁধের আড়াইশ মিটার অংশ নদীতে তলিয়ে যায়। ওই সময় ১৩টি বসতঘর ও দুটি দোকান ঘর সরিয়ে নেন এলাকাবাসী।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওয়াহিদ হোসেন, জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায়, পাউবো ফরিদপুরের প্রধান প্রকৌশলী মো. শাজাহান সিরাজ, পাউবো শরীয়তপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

জাজিরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০টি পরিবারের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে এবং তাদের মধ্যে শুকনা খাবার দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন বলেন, “সোমবার রাত থেকে নতুন করে না ভাঙলেও আমরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি।”

মঙ্গল মাঝির ঘাট বাজারের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন দেওয়ান বলেন, “আকস্মিক ভাঙনের কারণে শ্রমিক সংকট শুরু হয়েছে। পাশাপাশি তিন দিন ধরে প্রচন্ড বৃষ্টি, তাতে আমাদের অনেক কষ্ট বেড়ে গেছে।

“এজন্য পরিবারের সদস্যরাই নিজেদের মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। যে কোনো উপায়ে ভাঙন রোধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি আমরা।”

স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, “নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে পাড়ের কাছে চলে আসায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত বছর থেকে এই এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা এলাকাবাসী আতঙ্কের মধ্যে আছি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শত শত পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাবে।”

জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, “ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ পুনর্নিমাণের চেষ্টা চলছে। বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়া ৩০টি পরিবারকে পাঁচ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়েছে।

“যাদের ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিলীন হয়েছে, তাদের মধ্যে দুই বান্ডেল টিন ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি তাদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করছে প্রশাসন।”

শরীয়তপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তারেক হাসান বলেন, “আমরা মঙ্গলবার দুপুর থেকে জরুরি কাজের অংশ হিসেবে ভাঙন কবলিত এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছি।”