১০:২৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৪ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আকুর ২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ, রিজার্ভ দাঁড়ালো ২৯.৫৩ বিলিয়নে

  • Reporter Name
  • Update Time : ০৪:০৫:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫
  • ১৬ Time View

বাংলাদেশ ব্যাংক এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু)-এর মে ও জুন মাসের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) আকুকে ২ বিলিয়ন (২০১৯ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলারে।

তবে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের ইতিবাচক ধারা বজায় থাকায় এই পরিশোধের পরও রিজার্ভ গ্রহণযোগ্য ও স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আজ আকুর বিল হিসেবে ২০১৯ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও রিজার্ভে বড় চাপ পড়েনি। বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় এখনও স্থিতিশীল। প্রবাসী আয় ও রফতানি আয়ের উন্নতির কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।’

তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ৭ জুলাই শেষে মোট রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৯.৫৩ বিলিয়ন ডলার, আর আইএমএফের বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে এই রিজার্ভ ২৪.৪৬ বিলিয়ন ডলার। তবে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (এনআইআর) বা প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ২৯ জুন পর্যন্ত ২০.৩২ বিলিয়ন ডলার, যা আকুর বিল পরিশোধের পরও ১৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রয়েছে।

বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় বিবেচনায়, এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধ সক্ষমতা থাকলে রিজার্ভকে নিরাপদ ধরা হয়। সেই হিসেবে বাংলাদেশ এখন তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে।

রফতানিতে ৮.৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দেশের রফতানি খাতে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পণ্য রফতানি আয় ৮.৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে দাঁড়িয়েছে ৪৮.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আগের বছর এই আয় ছিল ৪৪.৪৬ বিলিয়ন ডলার।

রেমিট্যান্সে ইতিহাস গড়া প্রবাহ
রেমিট্যান্সেও অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ৩০.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ। আগের অর্থবছরে এই আয় ছিল ২৩.৭৪ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ২৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, হুন্ডি ও অবৈধ পথে অর্থ পাঠানো রোধে কঠোর অবস্থানের ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। এই ধারাবাহিক প্রবাহ দেশের ডলার সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হয়েছে।

রিজার্ভ পতনের অতীত, পুনরুদ্ধারের বর্তমান
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। এরপর ব্যাপক অর্থপাচারের কারণে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তা নেমে আসে মাত্র ২০.৩৯ বিলিয়ন ডলারে। তবে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থপাচার রোধ ও রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় কঠোরতা আনার ফলে অবস্থার উন্নতি ঘটে।

বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে সরাসরি ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে এবং কেবল বকেয়া দায় পরিশোধেই ডলার ব্যয় করছে।

আকু কী?
আকু বা এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা, যার সদর দফতর ইরানের তেহরানে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার, ইরান, ভুটান ও মালদ্বীপ—এই সদস্য দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ নিষ্পত্তি করে। শ্রীলঙ্কার সদস্য পদ বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

News Editor

জনপ্রিয় খবর

বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে, শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের শুভেচ্ছা

আকুর ২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ, রিজার্ভ দাঁড়ালো ২৯.৫৩ বিলিয়নে

Update Time : ০৪:০৫:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশ ব্যাংক এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন (আকু)-এর মে ও জুন মাসের আমদানি বিল পরিশোধ করেছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) আকুকে ২ বিলিয়ন (২০১৯ মিলিয়ন) মার্কিন ডলার পরিশোধের পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলারে।

তবে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের ইতিবাচক ধারা বজায় থাকায় এই পরিশোধের পরও রিজার্ভ গ্রহণযোগ্য ও স্থিতিশীল অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘আজ আকুর বিল হিসেবে ২০১৯ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও রিজার্ভে বড় চাপ পড়েনি। বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় এখনও স্থিতিশীল। প্রবাসী আয় ও রফতানি আয়ের উন্নতির কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।’

তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সক্ষমতা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ৭ জুলাই শেষে মোট রিজার্ভ দাঁড়ায় ২৯.৫৩ বিলিয়ন ডলার, আর আইএমএফের বিপিএম-৬ পদ্ধতিতে হিসাব করলে এই রিজার্ভ ২৪.৪৬ বিলিয়ন ডলার। তবে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (এনআইআর) বা প্রকৃত রিজার্ভ ছিল ২৯ জুন পর্যন্ত ২০.৩২ বিলিয়ন ডলার, যা আকুর বিল পরিশোধের পরও ১৮ বিলিয়ন ডলারের ওপরে রয়েছে।

বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয় বিবেচনায়, এই রিজার্ভ দিয়ে প্রায় সাড়ে তিন মাসের আমদানি খরচ মেটানো সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী, ন্যূনতম তিন মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধ সক্ষমতা থাকলে রিজার্ভকে নিরাপদ ধরা হয়। সেই হিসেবে বাংলাদেশ এখন তুলনামূলক ভালো অবস্থানে আছে।

রফতানিতে ৮.৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি
রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দেশের রফতানি খাতে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে পণ্য রফতানি আয় ৮.৫৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে দাঁড়িয়েছে ৪৮.২৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আগের বছর এই আয় ছিল ৪৪.৪৬ বিলিয়ন ডলার।

রেমিট্যান্সে ইতিহাস গড়া প্রবাহ
রেমিট্যান্সেও অভাবনীয় সাফল্য এসেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রবাসী আয় দাঁড়িয়েছে ৩০.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা দেশের ইতিহাসে এক অর্থবছরে সর্বোচ্চ। আগের অর্থবছরে এই আয় ছিল ২৩.৭৪ বিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ২৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, হুন্ডি ও অবৈধ পথে অর্থ পাঠানো রোধে কঠোর অবস্থানের ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। এই ধারাবাহিক প্রবাহ দেশের ডলার সংকট মোকাবিলায় সহায়ক হয়েছে।

রিজার্ভ পতনের অতীত, পুনরুদ্ধারের বর্তমান
প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮.০৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। এরপর ব্যাপক অর্থপাচারের কারণে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে তা নেমে আসে মাত্র ২০.৩৯ বিলিয়ন ডলারে। তবে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থপাচার রোধ ও রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় কঠোরতা আনার ফলে অবস্থার উন্নতি ঘটে।

বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে সরাসরি ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে এবং কেবল বকেয়া দায় পরিশোধেই ডলার ব্যয় করছে।

আকু কী?
আকু বা এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন হলো একটি আন্তঃদেশীয় লেনদেন নিষ্পত্তি ব্যবস্থা, যার সদর দফতর ইরানের তেহরানে। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মিয়ানমার, ইরান, ভুটান ও মালদ্বীপ—এই সদস্য দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আমদানির অর্থ নিষ্পত্তি করে। শ্রীলঙ্কার সদস্য পদ বর্তমানে স্থগিত রয়েছে।